অগোছালো ডেথ বোলিংয়ে তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক:
তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের। এশিয়া কাপের বাঁচা-মরার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের আশা জাগিয়েও পারলো না সাকিব বাহিনী। ২ উইকেটের পরাজয়ে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচের দুই হারে মাত্র তিন দিনেই এশিয়া কাপ মিশন শেষ বাংলাদেশের। এর আগে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছিল সাকিবরা।
তিন দিনেই শেষ বাংলাদেশের এশিয়া কাপ
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রান ডিফেন্ড করতে নেমে দুর্দান্ত এক ওভার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভারে তিনি খরচ করেন মাত্র ২ রান। ২ ওভার শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯। লঙ্কা শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন এবাদত হোসেন। যদিও তাকে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বল হাতে তুলে দেয়া হয়। তার শিকারে পরিণত হয় মাঠ ছাড়েন পাথুম নিসাঙ্কা। নিসাঙ্কা যখন আউট হন, তখন লঙ্কানদের সংগ্রহ ৪৫। ওভারের শেষ বলে এবাদত ফিরিয়ে দেন চারিথ আসালাঙ্কাকেও। ব্যক্তিগত ১ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি।
মেহেদী হাসানের করা ওভারের শেষ বলে কুশাল মেন্ডিসকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রি-প্লেতে দেখা যায়, মেহেদী বল করেছেন সীমানা অতিক্রম করে। ফলে মাঠও ছাড়তে হয়নি লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে। দলপতি সাকিব পরের ওভার করতে আবার ডাকেন এবাদতকে। বাংলাদেশি পেসারও বল হাতে নিয়ে নিরাশ করেননি। নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ফেরান দানুস্কা গুনাথিলাকাকে। তাসকিন আহমেদের হাতে ধরা পড়ার আগে ৬ বলে ১১ রান করেন গুনাথিলাকা।
নিজের প্রথম ওভারে তাসকিন এক চারসহ দিয়েছিলেন ৭ রান। পাননি কোনো উইকেটের দেখাও। তাসকিন আবার বোলিংয়ে এসে দ্বিতীয় বলে চার হজম করেন। পরের দুটি বলে একটি ডট ও একটি সিঙ্গেল দেন তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে আউট করেন ভানুকা রাজাপাকসেকে। ৯ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান তখন ৭৭। বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন কুশাল মেন্ডিস। দেড়শর বেশি স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাট করছিলেন। সেই মেন্ডিসকে ফিরিয়েছেন টাইগার পেসার ফিজ। ৩৭ বলে ৬০ রান করেছেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
হাসারাঙ্গাকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের আরেক ভয়ের কারণ শানাকা আউট হন একেবারে সীমানা দড়ির কাছে। মেহেদী হাসানের বলে সেই ক্যাচটি নেন মোসাদ্দেক হোসেন। স্কোর বোর্ডে ৪৫ রান যোগ করেছিলেন লঙ্কান দলপতি। ১০ বলে ১৬ রান করে সাকিবের থ্রোয়ে রানআউট হন চামিকা করুনারত্নে। শেষ দিকে আসিথা ১০ রান করেন।
এর আগে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে টিম টাইগার্সের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৩। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাই হয় ৪ দিয়ে। মদুশাঙ্কার করা ওভারের প্রথম বলে ব্যাট ছোঁয়াতে না পারলেও সেটি মেহেদী হাসান মিরাজের পায়ে লেগে সীমানা দড়ি অতিক্রম করে। পরের দুটি বলেও কোনো রান তুলতে পারেননি মিরাজ। ষষ্ঠ বলে স্ট্রাইক পেয়েই ফাইন লেগে ৪ হাঁকান দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান। মহেশ থিকশানার পরের ওভারে টাইগাররা সংগ্রহ করে মাত্র ৩ রান।
দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মন। তবে সুযোগটা প্রথম ম্যাচে কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। আসিথা ফার্নান্দোর বলে ৫ রান করে আউট হয়েছেন সাব্বির। আসিথার করা বলে ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক কুশাল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নামেন। যদিও তাকে দেখে এমন কিছুই মনে হয়নি। ইনিংস শুরুর কয়েকটা বল বাদ দিলে যথেষ্ট আগ্রাসী ঢংয়েই ব্যাট করেছেন মিরাজ। মহেশ থিকশানার করা দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। ওই ওভারে সিঙ্গেলসহ বাংলাদেশ তুলে ১০ রান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মেহেদী দুটি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কাও হাঁকান, তাতে এক ওভারেই উঠে ১৮ রান। পাওয়ারপ্লে শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় এক উইকেটে ৫৫ রান।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ইনিংস ওপেন করতে নেমে দারুণ প্রদর্শনী দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৪৬.১৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি খেলেন ৩৮ রানের এক ঝড়ো ইনিংস। এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। ২৬ বলে মিরাজের ইনিংসটিতে ছিল সমান ২টি করে চার ও ছয়ের মার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। মিরাজের পর ব্যক্তিগত ৪ রান করে আউট হন মুশফিকুর রহিম। ৩ উইকেট হারিয়ে অনেকটা মন্থর হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংসের দৌড়। প্রথম ৬ ওভারে ৯.১৭ রেটে ৫৫ রান তুললেও পরের ৪ ওভারে মাত্র ৫ রেটে আসে ২০ রান। এর মধ্যে আবার সাকিব আল হাসানের উইকেটও হারায় বাংলাদেশ। ২২ বলে ২৪ রান করে সাকিব বিদায় নেন থিকশানার বলে বোল্ড হয়ে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ না শ্রীলঙ্কা, কোন দলের ওয়ার্ল্ড ক্লাস বোলার আছে?
এক প্রান্তে আফিফ হোসেন রানের চাকা সচল রাখলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলছিলেন সেই পুরনো ঢংয়েই। তার একের পর এক ডট বলে ক্ষীণ হয়ে আসছিল বাংলাদেশের ইনিংস বড় হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু দলীয় ১৫তম ওভারে হাত খুলে খেলেন রিয়াদ। ওই ওভারে একাই তোলেন ১৪ রান। আফিফ আউট হন ব্যক্তিগত ৩৯ রানে। ফেরার আগে রিয়াদের সঙ্গে তিনি গড়েন ৫৭ রানের জুটি। ২২ বলে ইনিংসে আছে ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মার। আফিফের বিদায়ের পরপরই ফিরে যান রিয়াদ। এক সময় সাইলেন্ট কিলার হিসেবে ২২ বলে করেন ২৭ রান। মেহেদী হাসান ১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন করুনারত্নের বলে। বাকিদের মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন ৯ বলে ২৪ ও তাসকিন আহমেদ ১১ রান করেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে দুটি করে উইকেট পান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও চামিকা করুনারত্নে। একটি করে উইকেট পান দিলশান মদুশাঙ্কা, মহেশ থিকশানা ও আসিথা ফার্নান্দো।