জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৫:০৯,অপরাহ্ন ১৮ আগস্ট ২০২২
দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয় ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণের তাগিদ দিয়ে তারা বলেছেন, এলএনজি’র ওপর অধিকতর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে আরও আর্থিক সংকটে ফেলবে। এ সংকট সমাধানের উপায় হিসেবে দেশীয় গ্যাস মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেকেই বলেন, দেশে গ্যাস নেই। যেটুকু আছে তা উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট নয়। বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করেই চলতে হবে। জনগণের সামনে এসব কথা বলার আগে আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে। বদরুল ইমাম বলেন, সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই বলেন, মিয়ানমার গত ১০ বছরে গ্যাস পায়নি। যা পাওয়ার অনেক আগে পেয়েছে।
কিন্তু একথা অসত্য, মিয়ানমার গত দু-তিন বছর আগেও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। তিনি বলেন, কেউ যদি বলে আমাদের সমুদ্রের অবস্থা আমরা জানি না। এটা ভুল কথা। আমাদের রিজার্ভ ও রিসোর্স নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। উপর মহল বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকে বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস নেই। এটা বলা উচিত না। তারচেয়ে বরং বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাসিসমেন্ট দেখে তাদের কথা বলা উচিত। বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের আয়তন মাত্র ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তারা কূপ খনন করেছে ১৭০টি। অথচ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের দেশে কূপ খননের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি। মিয়ানমার পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না, এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাগরে ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। অথচ আমরা এখনো উত্তোলনে যেতে পারিনি। অন্যদিকে মিয়ানমার শিগগিরই সাগরে গ্যাস উত্তোলন শুরু করতে পারে। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে নিজেদের সম্পদ নিজেরাই উত্তোলন করবো।
কিন্তু আমরা জাতির পিতার নীতি থেকে সরে এসেছি। তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আজকে আমরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে সংকটটা দেখতে পাচ্ছি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে পুরো অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা খুব আকস্মিক বা হঠাৎ করেই হয়েছে, বিষয়টা এমন না। যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে এটা তৈরি করার মতোই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিদ্যুৎ খাতে আমাদের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাগরিক থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে সরকার যে ভর্তুকি দিচ্ছে এই ভর্তুকির সুবিধা কারা পাচ্ছে? গত ১১ বছরে এ রকম টাকা দেয়া হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ১২টা এ রকম কোম্পানিকে টাকা দেয়া হচ্ছে। দেশ এখন খাদের কিনারে বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমরা সংকটের মধ্যে আছি। আরও ভয়াবহ সংকটের দিকে যাবো। জানি না এর পরিণতি কী হবে! দেশে এখন চলছে ভাই-ব্রাদার তন্ত্র। সেই সঙ্গে আছে মতলববাজির উন্নয়ন। যার মধ্যে আমরা নিপতিত হয়েছি। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এলএনজি’র উপর অধিকতর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে আর্থিক সংকটে ফেলবে। এ সংকট সমাধানের একটিই উপায়, সেটি হলো দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, জ্বালানির সংকট আমাদের অনিবার্য ছিল না। এটা অনিবার্য করে তোলা হয়েছে। একসময় বলা হয়েছিল বাংলাদেশ গ্যাসের উপরে ভাসছে। এর পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিল, গ্যাসটা রপ্তানি করা। এরপর বলা হলো আমাদের গ্যাস নাই এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম। যদিও সরকার ২০১০ সালে নরওয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে যেই সনদটা করেছিল সেখানে শুধু স্থলভাগেই ৩৪ থেকে ৩৮টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১২ সালে সমুদ্র বিজয়ের পর সেখানেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। এর পরও বলা শুরু করলো যে, গ্যাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের পুরো ব্যবস্থাটাকে আমদানিনির্ভর করে তোলা। পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারতো। সরকারের উচিত প্রতি বছর বাজেটে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট করে অন্তত ১০টি কূপ খনন করা। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসবে। কিন্তু চাহিদা হবে তখন ৩ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তখন এলএনজি আমদানিনির্ভরতা আরও বাড়বে। তবে তার আগেই আমাদের গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী হতে হবে। জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয় ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণের তাগিদ দিয়ে তারা বলেছেন, এলএনজি’র ওপর অধিকতর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে আরও আর্থিক সংকটে ফেলবে। এ সংকট সমাধানের উপায় হিসেবে দেশীয় গ্যাস মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেকেই বলেন, দেশে গ্যাস নেই। যেটুকু আছে তা উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট নয়। বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করেই চলতে হবে। জনগণের সামনে এসব কথা বলার আগে আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে। বদরুল ইমাম বলেন, সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই বলেন, মিয়ানমার গত ১০ বছরে গ্যাস পায়নি। যা পাওয়ার অনেক আগে পেয়েছে।
কিন্তু একথা অসত্য, মিয়ানমার গত দু-তিন বছর আগেও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। তিনি বলেন, কেউ যদি বলে আমাদের সমুদ্রের অবস্থা আমরা জানি না। এটা ভুল কথা। আমাদের রিজার্ভ ও রিসোর্স নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। উপর মহল বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকে বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস নেই। এটা বলা উচিত না। তারচেয়ে বরং বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাসিসমেন্ট দেখে তাদের কথা বলা উচিত। বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের আয়তন মাত্র ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তারা কূপ খনন করেছে ১৭০টি। অথচ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের দেশে কূপ খননের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি। মিয়ানমার পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না, এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাগরে ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। অথচ আমরা এখনো উত্তোলনে যেতে পারিনি। অন্যদিকে মিয়ানমার শিগগিরই সাগরে গ্যাস উত্তোলন শুরু করতে পারে। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে নিজেদের সম্পদ নিজেরাই উত্তোলন করবো।
কিন্তু আমরা জাতির পিতার নীতি থেকে সরে এসেছি। তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আজকে আমরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে সংকটটা দেখতে পাচ্ছি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে পুরো অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা খুব আকস্মিক বা হঠাৎ করেই হয়েছে, বিষয়টা এমন না। যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে এটা তৈরি করার মতোই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিদ্যুৎ খাতে আমাদের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাগরিক থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে সরকার যে ভর্তুকি দিচ্ছে এই ভর্তুকির সুবিধা কারা পাচ্ছে? গত ১১ বছরে এ রকম টাকা দেয়া হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ১২টা এ রকম কোম্পানিকে টাকা দেয়া হচ্ছে। দেশ এখন খাদের কিনারে বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমরা সংকটের মধ্যে আছি। আরও ভয়াবহ সংকটের দিকে যাবো। জানি না এর পরিণতি কী হবে! দেশে এখন চলছে ভাই-ব্রাদার তন্ত্র। সেই সঙ্গে আছে মতলববাজির উন্নয়ন। যার মধ্যে আমরা নিপতিত হয়েছি। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এলএনজি’র উপর অধিকতর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে আর্থিক সংকটে ফেলবে। এ সংকট সমাধানের একটিই উপায়, সেটি হলো দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, জ্বালানির সংকট আমাদের অনিবার্য ছিল না। এটা অনিবার্য করে তোলা হয়েছে। একসময় বলা হয়েছিল বাংলাদেশ গ্যাসের উপরে ভাসছে। এর পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিল, গ্যাসটা রপ্তানি করা। এরপর বলা হলো আমাদের গ্যাস নাই এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম। যদিও সরকার ২০১০ সালে নরওয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে যেই সনদটা করেছিল সেখানে শুধু স্থলভাগেই ৩৪ থেকে ৩৮টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১২ সালে সমুদ্র বিজয়ের পর সেখানেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। এর পরও বলা শুরু করলো যে, গ্যাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের পুরো ব্যবস্থাটাকে আমদানিনির্ভর করে তোলা। পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারতো। সরকারের উচিত প্রতি বছর বাজেটে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট করে অন্তত ১০টি কূপ খনন করা। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসবে। কিন্তু চাহিদা হবে তখন ৩ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তখন এলএনজি আমদানিনির্ভরতা আরও বাড়বে। তবে তার আগেই আমাদের গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী হতে হবে।