ইউনিট অসমাপ্ত, সম্মেলন নিয়ে সিলেট যুবদলে তোড়জোড় শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৪:২৭,অপরাহ্ন ১৮ আগস্ট ২০২২
হঠাৎ করেই সিলেট যুবদলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে সম্মেলন ও কাউন্সিলের তাগিদ। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হতে পারে এ কাউন্সিল। এর মাধ্যমে আসতে যাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের নতুন কমিটি। নির্দেশনার পরপরই সরব হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে- ইউনিটগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করে জেলা ও মহানগরের সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে দল দুর্বল হতে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। নিকট অতীতে জেলা বিএনপি সব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেলার কাউন্সিল করেছিল। মহানগর বিএনপিতেও এখন চলছে সেই তোড়জোড়।
এই অবস্থায় যুবদলের ক্ষেত্রে ভিন্ন ফরম্যাটে নাখোশ অনেকেই। এরপরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাউন্সিলে প্রার্থী হয়ে ভোটারের কাছাকাছি ছুটে যাচ্ছেন নেতারা। যুবদল নেতারা জানিয়েছেন- কোন ফরম্যাটে হবে কাউন্সিল এটা এখনো অজানা। সুপার ফাইভ না আহ্বায়ক কমিটির সব সদস্যই ভোটার হবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি । আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। তাদেরকে কাউন্সিলর করে জেলা ও মহানগরের কাউন্সিলের আয়োজন করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র তো দূরের কথা সাদা চোখে এটি বেমানান বলে জানিয়েছেন নেতারা। তবে- জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু জানিয়েছেন- ‘দলের গঠনতন্ত্রে কাউন্সিল বিষয়ে অনেকভাবে স্পষ্টতার উল্লেখ আছে; সিলেটের প্রেক্ষাপটে সবগুলো উপজেলা ও পৌর কমিটি বর্তমানে যথেষ্ট স্থিতিশীল।
আগামীতে আন্দোলন ও সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার স্বার্থে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে আমরা বাস্তবতার নিরিখে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আগামীর যুবদল যুগোপযোগী এবং আন্দোলনমুখী করতে বর্তমান উপজেলা নেতৃত্বের বিকল্প নেই।’ সিদ্দিকুর রহমান পাপলু যুবদলের আহ্বায়ক হলে তিনি এবার সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না। জেলা যুবদলের রাজনীতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে ইতি টানছেন তিনি। জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল নিয়ে মূল সংগঠন বিএনপিতে আফসোসের অন্ত ছিল না। প্রায় দেড়যুগ সিলেটে যুবদলের সাংগঠনিক ভিত্তি অনুপস্থিত ছিল। যা ছিল সেটি কেবল কাগুজে-কলমে। এরপর সিলেট যুবদলকে ঢেলে সাজাতে ২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। জেলায় আহ্বায়ক করা হয় সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে ও সদস্য সচিব হন মকসুদ আহমদ। এছাড়া- নজিবুর রহমান নজিবকে আহ্বায়ক ও শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেককে সদস্য সচিব করে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকলে বলা হয়েছিল; তিন মাসের আওতাধীন ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করে জেলা ও মহানগরের সম্মেলন ও কাউন্সিল করতে হবে। কিন্তু তিন মাসের কমিটিতে কেটে গেছে প্রায় তিন বছর।
এখন জেলার অধিভুক্ত ১৮ উপজেলা ও পৌর ইউনিটে আছে আহ্বায়ক কমিটি। একটিরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। সিলেটের প্রায় ১০৫টি ইউনিয়ন কমিটির মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও সম্মেলন হয়নি। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন- ‘করোনার মধ্যেও প্রায় এক বছর আগেই ১৮টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর রমজান, পরে বন্যাসহ নানা কারণে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় হাত দিতে পারিনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জেলার কাউন্সিল করার প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু কেন্দ্র থেকে যেহেতু নতুন নির্দেশনা এসেছে আমরা এই নির্দেশনা পালনে ব্যস্ত সময় পার করছি। কারণ- যে সিদ্ধান্ত এসেছে তা দলের প্রয়োজনেই এসেছে।’ সিলেট মহানগর যুবদলের অধিভুক্ত ২৭টি ওয়ার্ডেরও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজিব জানিয়েছেন- ‘যদিও এখন কাউন্সিল করার মতো মন-মানসিকতা নেই এরপরও দলের প্রয়োজনে আমরা প্রস্তুত। আমরা দু’-একদিনের মধ্যে ঢাকায় যাচ্ছি।
সম্মেলন ও কাউন্সিল করার যে নির্দেশনা দেয়া হবে সেটি পালন করা হবে।’ তিনি জানান- ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সিলেট মহানগরে যুবদল শক্তিশালী করা। যে প্রক্রিয়াই হোক সেটাতে আমরা শতভাগ করবো। এবং এই কাজের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে বলে জানান তিনি।’ নজিবুর রহমান নজিবও আর মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনিও পাপলুর মতো যুবদলের রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন। মূল দল মহানগর বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। এদিকে- হঠাৎ করে সিলেট জেলা ও মহানগর সম্মেলনের ঘোষণা আসায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। গতকাল বিকালে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করতে অধিভুক্ত বিভিন্ন ইউনিটে আছেন। জেলা যুবদলের সিনিয়র সদস্য ও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লিটন আহমদ জানিয়েছেন- ‘দলকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করার জন্য কাউন্সিল। আমরা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি। এতে অনেক কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে।
এখন দলের প্রয়োজনে জেলার কাউন্সিলের আয়োজন করা হচ্ছে; এ কারণে আমরা তৃণমূলের নেতাদের কাছে যাচ্ছি। তৃণমূলের রায়ে সিলেট জেলা যুবদলের শক্তিশালী একটি কমিটি আগামীতে আসবে। এই কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে। একই ভাবে অধিভুক্ত ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলে আন্দোলনে আরও বেগবান হওয়া সম্ভব। এরপরও আহ্বায়ক কমিটির নেতারা মাঠে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। সিলেট যুবদল অতীতের চেয়ে বর্তমানে অনেক শক্তিশালী বলে দাবি করেন তিনি।’ জেলা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী এডভোকেট সাঈদ আহমদ। আগে ছিলেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। সাঈদ জানান- ‘দলের প্রয়োজনে জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিলের ঘোষণা এসেছে। আমরা কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাউন্সিলররাই আগামী দিনের জন্য যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করবেন বলে জানান তিনি।’ মহানগর যুবদলের সিনিয়র সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এমদাদুল হক স্বপন জানিয়েছেন- ‘ঘোষণা আসার পরপরই তারা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। কেন্দ্র যখন বলেছে, তখন ২৭টি আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে মহানগর কাউন্সিল করা সম্ভব। তবে- এখনো আমরা জানি না আহ্বায়ক কমিটির সব সদস্য না সুপার ফাইভ ভোটার হবেন। এটি যত দ্রুত ঘোষণা করা হবে আমাদের জন্য তত ভালো হবে।’ দক্ষিণ সুরমা যুবদলের আহ্বায়ক বাবর আহমদ রনি জানিয়েছেন- ‘আমাদের ইউনিটে যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য ১০২ জন। এর মধ্যে সুপার ফাইভে ভোট হলে উৎসাহ- উদ্দীপনা কম হবে। যদি সবাই কাউন্সিলর হতে পারেন তাহলে জেলা যুবদলের কাউন্সিল আরও সক্রিয় ও অর্থপূর্ণ হবে। এতে নেতাকর্মীরা দ্বিগুণ উৎসাহিত হবে বলে জানান তিনি।’