কারারক্ষী পদে জালিয়াতি করে চাকুরী করছেন অন্যজন
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৫:৫৬,অপরাহ্ন ১৩ আগস্ট ২০২২
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম ওরফে এশু। ২০০৩ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগের লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে পুলিশি তদন্ত হয়। এর পর থেকে চাকরিতে যোগ দিতে নিয়োগপত্রের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিয়োগপত্র আসেনি। সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে কাপড়ের ব্যবসায় লেগে যান জহিরুল।
এদিকে গত বছরের (২০২১) ডিসেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কুলাউড়া পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে জহিরুলের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে জহিরুল ইসলাম কারারক্ষী (ক্রমিক নম্বর-২২০১৪) পদে কর্মরত বলে উল্লেখ করা হয়। কাউন্সিলরের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে জহিরুল বিস্মিত হন। পরে এ বিষয়ে কুলাউড়া থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে তাঁর স্থলে অন্য কেউ চাকরি করছেন বলে উল্লেখ করেন জহিরুল। একই সঙ্গে বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান তিনি। এরপর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তদন্ত করে জানতে পারে, একই ক্রমিক নম্বরে জহিরুল ইসলাম নামের কুমিল্লার আরেক ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে কারারক্ষী পদে চাকরি করছেন। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকৃত জহিরুলের নাম-ঠিকানা জালিয়াতি করার সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত জহিরুল ইসলাম তাঁর চাকরি ফিরে পেতে ঊর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার জহিরুলের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয়। সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।
তদন্তে দেখা যায়, চাকরি বহিতে কারারক্ষীর নাম জহিরুল ইসলাম এশু। অথচ কর্মরত কারারক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম শুধু জহিরুল ইসলাম। চাকরি বহিতে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা উল্লেখ করা। আর জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর উল্লেখ করা। অন্যদিকে জহিরুল ইসলাম এশুর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চাকরি বহির ঠিকানার মিল পাওয়া যায়। জহিরুল ইসলাম এশুর বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মা সেলিনা বেগম।
আর কারারক্ষী পদে চাকরিরত জহিরুল ইসলামের বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মা আয়েশা খাতুন। তদন্তের পর চাকরিরত কারারক্ষী জহিরুল ইসলামকে ‘ভুয়া’ উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান সিলেটের কারা মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, চাকরি বহিতে দেওয়া স্থায়ী ঠিকানায় জহিরুল ইসলাম তাঁর বাড়ি কুলাউড়ায় উল্লেখ করলেও তদন্তকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন কেউ-ই তাঁকে চিনতে পারেননি। তাঁর বিরুদ্ধে করা বিভাগীয় মামলারও তদন্ত চলছে। কীভাবে তিনি চাকরিতে যোগদান করলেন, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই মামলার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
এর ২০ বছর পর একটি চিঠি পান শাহজাহানপুর ইউপির চেয়ারম্যান। সেই চিঠিতে জানানো হলো, মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন সিলেট কারাগারে। এরপর জানা গেল, মঈন উদ্দিন গ্রামে ওষুধের ব্যবসা করলেও তাঁর নাম–পরিচয়ে চাকরি করছেন অন্যজন।