দেশের ফুটবলের প্রতি অভিমান করেই লন্ডনে পাড়ি জমান সিলেটের ওয়াহেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২২, ৫:৫৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
যৌবন হারিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল এখন মৃতপ্রায়। বছর বছর প্রিমিয়ারসহ কিছু লিগ ও টুর্নামেন্ট হলেও তা আলোড়ন তুলতে ব্যর্থ। জীর্ণশীর্ণ ফুটবল নিয়ে এখন আর মাতামাতি হয় না। দেশের ফুটবলের এমন করুণ দশায় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক ফুটবলার। তবে বিদেশে থাকলেও ফুটবলের রুগ্ণদশা দেখে মন কাঁদে তাদের। তাদেরই একজন ওয়াহেদুর রহমান। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড়। যিনি ক্যারিয়ারের শুরুতেই মোহামেডান ও ঢাকা আবাহনীর মতো দলের হয়ে ঢাকার মাঠ মাতিয়েছেন। সাদা-কালোদের হয়ে জিতেছেন ‘কোটি টাকার’ সুপার কাপ।
পাঁচ বছর আগে দেশের ফুটবলের পাট চুকিয়েছেন। উন্নত জীবনের আশায় লন্ডনে এলেও ফুটবল ছেড়ে দেননি ওয়াহেদ আহমেদ। কাজে বের হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য হলেও ফুটবল পায়ে কারুকাজ করা তাঁর প্রতিদিনের রুটিন। ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত পার করা জাতীয় দলের সাবেক এ ফরোয়ার্ড লন্ডনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ এবং লন্ডন এফসিতে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাচ্ছেন। কিন্তু দেশের ফুটবলের মতো সেই তৃপ্তি যে পান না। আরও কিছুদিন বাংলাদেশের ফুটবলে থাকার ইচ্ছা থাকলেও অভিমান করেই লন্ডনে পাড়ি জমান সিলেটের এ ফুটবলার।
বুধবার লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী টাওয়ার ব্রিজের সামনে দাঁড়ানো হাস্যোজ্জ্বল ওয়াহেদের ভেতরের কষ্টটাই যেন প্রকাশ পেয়েছে, ‘আমাদের ফুটবল কালচারটা একটু ভিন্ন। সেখানে অনেক পলিটিক্স হয়। যে কারণে অভিমান করেই বাংলাদেশের ফুটবল ছেড়ে এখানে এসেছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাই না। সবার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো রাখতে চাই।’
২০০৫ সালে ঢাকা মোহামেডান দিয়ে ফুটবলে পথচলা শুরু। এরপর ফকিরাপুল, শেখ রাসেল এবং সর্বশেষ ঢাকা আবাহনীর জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন ওয়াহেদ আহমেদ। জাতীয় দলের জার্সিতে চারটি ম্যাচ খেললেও কোনো গোল নেই তাঁর নামের পাশে। যখন সেরা সময় পার করছিলেন, তখনই কিনা দলে উপেক্ষিত হন তিনি। যে কারণে ২০১৭ সালে সবকিছু ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমান। তবে এখানে ওয়াহেদ বেশ ভালো আছেন। ব্যবসার পাশাপাশি ফুটবলকে নিয়ে গভীর চিন্তা তাঁর। ওয়াহেদ ইস্ট লন্ডনে পরিবার নিয়ে থাকছেন। বাংলাদেশের সোনালি অতীত ক্লাবের আদলে বাঙালিভিত্তিক লন্ডন এফসিতে খেলেন তিনি। এই ক্লাবের ৩৫ বছরের বেশি বয়সীরাই শুধু খেলেন। আর লন্ডন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ তো বাংলাদেশের ফুটবলের মতোই! এখানে সাতজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং চারজন বিদেশি প্লেয়ার খেলেন। লন্ডনভিত্তিক দলগুলো নিয়ে এ লিগটি হয় সামারে প্রতি রোববারে। ১৩টি দল নিয়ে হওয়া এ প্রতিযোগিতায় ম্যাচের সময়কাল ৭০ মিনিট। ক্লাব পিওয়াইও এফসিতে খেলেন ওয়াহেদ।
সুন্দর জীবন, ফুটবলও খেলছেন। তার পরও কিছু একটা না পাওয়ার হাহাকার। জাতীয় দলের ক্যাম্প, ক্লাবে সবার সঙ্গে সেই আড্ডা, ওয়াহেদ যেন ফিরে গেলেন সেই স্মৃতিতে, ‘প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে এখানে আসা। আসলে এই দেশের আবহাওয়া সবকিছু খুবই সুন্দর। সত্য কথা বলতে, বাংলাদেশের ফুটবলটা আসলে খুব মিস করতেছি। যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন পরিবারের ইচ্ছা ছিল ফুটবলার হবো। আমারও স্বপ্টম্ন ছিল আবাহনী-মোহামেডান দুটো টিমে খেলব। আল্লাহ আমার এই স্বপ্টম্নকে পূরণ করেছে। আমি জাতীয় দলেও খেলেছি। হয়তো বা আমার স্বপ্নটা বেশি দীর্ঘায়িত করার কথা ছিল, সেটা করতে পারিনি।’ কেন স্বপ্টম্নটা দীর্ঘায়িত করতে পারেননি সেই ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘আমি যখন ছিলাম, তখন ফুটবলের অবস্থা একটু ডাউন ছিল। মনে করছিলাম হয়তো এ দেশে আসার পর কোনো একটা ক্লাবের সঙ্গে জড়িত হবো।’
বাংলাদেশের ফুটবল ছাড়লেও এখনও জাতীয় দল এবং ঘরোয়া লিগের খেলাগুলো দেখেন। মাঝেমধ্যে মনে হয় আরও কিছুদিন চাইলে খেলতে পারতাম। কিন্তু একটু পরই তো ভাবেন, আমি তো অন্য কারণে লন্ডনে চলে এসেছি। ‘প্রথম যখন আসছিলাম, তখন অনেক খারাপ লাগছিল। যেহেতু খুব ছোট থেকে ফুটবল শুরু। আর আমার পরিবারের সবাই ফুটবল পছন্দ করে। তবে এখন একটু অ্যাডজাস্ট হয়ে গেছি। বাংলাদেশের ফুটবল এবং নিজের ওয়াহেদকে মিস করি।’
সিলেটের ফুটবলার মানেই লন্ডনের দিকে ঝুঁকে পড়া। ওয়াহেদের মতো তকলিসসহ আরও অনেকে দেশ ছেড়েছেন। তবে বিপলু, মতিন, জনিরা যেন অবসরের আগে দেশ না ছাড়েন সেই অনুরোধ ওয়াহেদের, ‘ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনের জীবনটা সুন্দর। হয়তো বা আরও কিছুদিন খেলে আসতে পারতাম। তবে এখন যাঁরা সিলেটের ফুটবলার আছেন, তাঁদের একটা পরামর্শ দেবো, খেলা চলাকালে যেন না আসে। একবার অবসর নেওয়ার পর আসলেই ভালো।’ ফুটবল ছেড়েছেন, তবে দেশের ফুটবলের জন্য কাজ করতে চান। একাডেমি গড়ে তুলে সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে চান প্রতিভাবান ফুটবলার। ওয়াহেদের স্বপ্নটা এখন এটাই।