বিসিবি-সাকিব লড়াইয়ে হারছে শুধু ‘ক্রিকেট’!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২২, ৪:২০ অপরাহ্ণ
‘বেট উইনার’ সাকিব আল হাসান কি ছাড়বেন? নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দূরে সরিয়ে দেবে সাকিবকে? গতকাল বিকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল এমনটাই। শেষ পর্যন্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলবেন জাতীয় দলে। জুয়ার বিজ্ঞাপন থেকেও সরে এলেন তিনি। তবে ভালো মন্দ যাই হোক এরই মধ্যে দেশের ক্রিকেট হেরে যাবে কত শতবার তার হিসেবটা কে রাখবেন! গতকাল এশিয়া কাপের দল ঘোষণার শেষ দিন ছিল। এর আগেও তিন দিন সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল বিসিবি। কিন্ত সাকিবের কারণে ঘোষণা হয়নি দল। এতকিছুর পর টাইগাররা যখন খেলতে যাবে এশিয়া কাপে তখন এর প্রভাবটা যে দলের ওপর পড়বে তাকি আর বলার অপেক্ষা রাখে! শুধু তাই নয়, দেশের নতুন ও আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছেও আদর্শ ক্রিকেটার সাকিবের আচরণে যাচ্ছে ভুল বার্তা।
কে বলতে পারবে এমন ঘটনা তাদেরকেও বিপথগামী করবে না? সেই সঙ্গে বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তিরও ১২টা বাজার উপক্রম। তবে জুয়ার বিষয়ে বিসিবি’র শক্ত অবস্থানকে ইতিবাচক না বলারও কারণ নেই। তাদের এই কঠোর অবস্থানের কারণেই সাকিব শেষ পর্যন্ত নত হয়ে চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি শুনেছি যে সাকিব চুক্তি বাতিল করেছে। এটি আমাদের সিইও সুজনকে জানিয়েছে সে। তবে একটি বিষয় ষ্পষ্ট করে বলছি মৌখিক কোনো কিছুই আমরা মানবো না। অবশ্যই লিখিত দিতে হবে।’
এর আগে গতকাল বিকালে এক জরুরী সভা শেষে বোর্ড সভাপতি জানিয়ে দেন জুয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন কিংবা দেশের ক্রিকেট- যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে সাকিবকে। তিনি বলেন, ‘এটুকু বলে রাখছি, বেটিং সংক্রান্ত কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটের সঙ্গে তার (সাকিব) কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ সাকিব আল হাসান সুনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কামাই করেছেন বদনামও। মাঠে অশ্লীল ভঙ্গি করে বিতর্ক ছড়িয়েছেন, দর্শকদের মারধর করেছেন, জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তা গোপন করেছেনও তিনি। আর প্রতিবারই হয়েছেন নিষিদ্ধ। সবশেষ আইসিসি তাকে এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সময়টাতে তাকে ছাড়া দলেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। দেশসেরা এই ক্রিকেটারের এখন দল ও দেশের জন্য অবদান রাখার সবচেয়ে বড় সুযোগ। কিন্তু বার বার তার বিতর্কিত ঘটনায় দেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দলের খারাপ সময়ে তাকে টেস্ট অধিনায়ক করে ফেরানো হয়েছে। বিসিবি তাকে ধুকতে থাকা টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব দিতে প্রস্তুত। দেশের ক্রিকেট ভক্তরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন হয়তো সাকিব ফিরে ধরবেন দলের হাল। কিন্তু ঠিক দেশের কঠিন সময়ে জেনে বুঝেই তিনি ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘বেট উইনার’ নিউজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আর তাতেই পড়েছেন ঝামেলায়। কারণ বেট উইনার একটি আন্তর্জাতিক জুয়ার প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে টাকার অংকটা ৭ থেকে ১০ কোটি হওয়াতে সাকিব তাদের চুক্তি ভাঙতে রাজি ছিলেন না। এতে বিসিবির প্রধানও জানিয়ে দেন কঠিন সিদ্ধান্তের কখা। নাজমুল হাসান বলেন, ‘কোন প্রকার সম্পৃক্ততা থাকা সম্ভব না। সম্পূর্ণ ওটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। না হলে সে আমাদের স্কোয়াডেই থাকবে না, অধিনায়কত্ব তো পরের ধাপ। দলে থাকারই সুযোগ নাই। এটা নিয়ে আলাপ আলোচনার কিছু নাই। এই সিদ্ধান্ত আগে থেকে নেওয়া। আর এ ব্যাপারে আমরা বেশ পরিষ্কার।’ তবে গতকালই সাকিবের চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। এসব কারণে এশিয়া কাপের দল ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে। কবে নাগাদ দল দেয়া হবে তা নিয়ে পাপন বলেন, ‘দলটা আমরা খুব সম্ভব আগামীকাল দিয়ে দেবো বা সর্বোচ্চ পরশু দিন। দৃশ্যটা কেমন হতে পারে সেসব নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। এখানে আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হয়েছে তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছে না। লিটন দাস, সোহান ও রাব্বী তিনজনই ইনজুরিতে। সুতরাং তিনজনই নেই আমাদের স্কোয়াডে। দলটা গোছানোই ছিল মূল ইস্যু।’
এছাড়াও সাকিবকে কেন কোনো ছাড় দিচ্ছে না বিসিবি তা ষ্পষ্ট করেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘সাকিব ইস্যুতে দ্বিতীয় কোনো চিন্তা করার সুযোগ নাই। বিসিবি প্রথম দিকের মতো অটলই আছে। আমি যখন এসেছি বোর্ডে তখনই বলেছি এসব ইস্যুতে জিরো টলারেন্স। কোনভাবেই বিসিবি এগুলো গ্রহণ করবে না। যে যেভাবেই এটাকে ব্যাখ্যা দিক বা না দিক। যে কারণে আশরাফুলের মতো খেলোয়ায়ড়কে আমাদের বাদ দিতে হয়েছে। সুতরাং এখানে কোনো সুযোগ নেই। আমরা একটা চিঠি দিয়েছি, উত্তর আমরা আজকের মধ্যে পাওয়ার কথা। আসলে গতকালকের মধ্যেই পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু শুনেছি সে বলেছে আজকের মধ্যে দিবে। তো আজকের দিনটা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’