শাবি’র অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগে বিতর্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২০:২৮,অপরাহ্ন ০২ আগস্ট ২০২২
ওয়েছ খছরুঃ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের মধ্যে ৭ জন। তারা ইতিমধ্যে সিলেকশন বোর্ডে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে ওই ৭ জনের মধ্যে একজনকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। সিন্ডিকেট সভা চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিক্ষক-১ আবু হেলাল চৌধুরী, একাডেমিক বিভাগের নাজিম উদ্দিন খান, প্রশাসন বিভাগের মো. ইউনূস আলী, জনসংযোগ বিভাগের মিফতাহুল হক, শিক্ষক-২ বিভাগের কালাম আহমদ চৌধুরী, পরিকল্পনা বিভাগের মাহবুব ফেরদৌস ও একাডেমিক বিভাগের সাহিনা সুলতানা।
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদের প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ৭ জনের মধ্যে প্রশাসন বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইউনূস আলীর পরীক্ষায় অংশ নেয়ার বিষয়টি বিতর্কিত। কারণ, মো. ইউনূস ২০০৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষা ছুটি নেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে আরও এক বছরের জন্য শিক্ষা ছুটি নেন। এই ছুটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর।
কিন্তু তার আগেই তিনি ওই বছরের ১৭ই এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এ সময় তিনি দুই বছরের ডিগ্রি সম্পন্ন করার বিষয়টি অবগত করেননি কিংবা তিনি ডিগ্রি নেননি। প্রার্থীদের দাবি; ২০১৮ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় সিদ্বান্ত নেয়া হয়- ‘কেউ স্ববেতনে শিক্ষা ছুটি নিয়ে ডিগ্রি অর্জনে ব্যর্থ হলে ছুটিকালীন সময়ের জন্য গৃহীত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ফেরত দিতে হবে। এছাড়া, ভোগকৃত শিক্ষা ছুটিকালীন সময় সক্রিয় চাকরি হিসেবে গণ্য হবে না। মোট প্রাপ্য শিক্ষা ছুটি থেকে ভোগকৃত শিক্ষা ছুটি বাদ যাবে।’ এই সভার সিদ্বান্ত গণ্য করা হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইউনূস আলী অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থীর যোগ্য হতে পারেন না বলে জানান ওই পদের প্রার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থীদের মূল্যায়ন এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর থেকে। ওই দপ্তরের প্রধান মো. ইউনূস আলী নিজেই। ফলে যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে তার অধীনস্তদের দিয়েই। এ কারণে সেখানে কারসাজি করা হয়েছে। অনেক বিষয় গোপন রেখে মো. ইউনূস আলীকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বাছাই করে সিলেকশন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্তব্য কলামেও শিক্ষা ছুটির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে সিলেকশন বোর্ডের কর্মকর্তারা অন্যান্য প্রার্থীর মতো তারও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন।
এ ব্যাপারে সিলেকশন বোর্ডের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আনোয়ার ইসলাম জানিয়েছেন, ওই পদে যারা আবেদন করেছেন; তাদের মধ্যে কে যোগ্য, কিংবা কে যোগ্য নয় সেটি তো দেখার বিষয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। ওখান থেকে কার্ড ইস্যুর মাধ্যমে প্রার্থীরা সিলেকশন বোর্ডে আসার সুযোগ পায়। যারা কার্ড পেয়েছে তাদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন সেটি সিন্ডিকেটে উপস্থাপনের পর চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, যোগ্যতার বিষয়টি সিলেকশন বোর্ড নির্ধারণ করে না। সিলেকশন বোর্ড প্রার্থীদের এসিআরসহ নানা বিষয় দেখে। এরপর যোগ্য প্রার্থীর সুপারিশ করে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন জানিয়েছেন, ‘২০১৮ সালের সিন্ডিকেট সভার সিদ্বান্ত কার্যকর হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। এর আগে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা ছিল না। এজন্য সিন্ডিকেট সভার ওই সিদ্বান্তের আওতায় পড়েন না ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইউনূস আলী। এ কারণে তাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সিকেশন বোর্ডে যাওয়ার কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। যা করা হয়েছে আইন মেনে করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তোলা অযৌক্তিক বলে জানান তিনি।’ শিক্ষা ছুটি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থী হওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মো. ইউনূস আলী। তিনি জানান, ‘দুই বছরের ছুটি নিলেও এক বছর পর এসে যোগদান করি। এবং ওই সময়ে সনদ না পেলেও ওয়ার্ক পেপার বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা আছে। এ কারণে তিনি ওই পদের জন্য বৈধ প্রার্থী। তার প্রার্থিতা নিয়ে যারা বিরোধিতা করছেন; তারা অযথাই বিরোধিতা করছেন বলে জানান তিনি।’
তবে- অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থী হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, ‘এই পদের জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউনূস আলী কোনোভাবে যোগ্য নয়। কারণ, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হতে হলে চাকরির মেয়াদ ১৮ বছর পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু তিনি যে শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন সেটি বৈধ নয়। এই সময় বাদ দিলে নির্ধারিত সময় পুরণে আরও দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। এই অপেক্ষা না করে নিজের অধীনস্তদের দিয়ে কারসাজি করে তিনি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পরীক্ষা দিতে কার্ড নিয়েছেন।’
তারা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কার্ড গ্রহণ ও সিকেশন বোর্ডের মুখোমুখি হওয়া নৈতিকতা বিবর্জিত এবং আইন বিরোধী। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত না করে সেটি করা হয়েছে। এ কারণে এ নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অভ্যন্তরে তোলপাড় হচ্ছে। বিতর্ক দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।