কী ঘটেছিল ওসমানীনগরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:২৬,অপরাহ্ন ২৭ জুলাই ২০২২
ওয়েছ খছরু ও জয়নাল আবেদীনঃ
লন্ডন প্রবাসী রফিকুল ও তার ছোট ছেলে মাইকুলের মৃত্যু রহস্যঘেরা। স্ত্রী হুসনা আরা, বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলাম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এমন ঘটনায় হতবাক, নির্বাক ওসমানীনগরের মানুষ। রফিকুলের পরিবারে কেনইবা এই বিপর্যয়- এ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ ঘটনার কোনো কিনারা পায়নি। আটক করা রফিকুলের শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক ও তার স্ত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে- লন্ডন প্রবাসী রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রী ও প্রাপ্ত বয়স্ক তিন সন্তানকে নিয়ে কেন একই কক্ষে ছিলেন? গতকাল দুপুরে ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর বাজারের একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় অচেতন অবস্থায় স্ত্রী হোসনারা বেগম, বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গোটা ঘর এলোমেলো। আসবাবপত্রও ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
কেউ পায়ের, কেউবা বুকের উপর- এভাবে একেকজন আরেকজনের সঙ্গে এলোমেলোভাবে পড়ে ছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যায়; ঘরের ভেতরে ধস্তাধস্তি হয়েছে। ঘরটির দক্ষিণের জানালা খোলা ছিল। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। ঘরে মোট সদস্য ছিলেন ১০ জন। এর মধ্যে ৫ জন লন্ডন ফেরত রফিকুলের পরিবারের। আর বাকি ৫ জন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তারা অক্ষত। কারো কিছুই হয়নি। অথচ রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুল মারাই গেলেন। বেঁচে যে তিনজন আছেন তাদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা কাটছে না।
রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বসবাস করেন লন্ডনে। স্ত্রী হোসনারাসহ তিন সন্তানও লন্ডন প্রবাসী। সন্তানদের জন্মও লন্ডনে। রফিকুলের বাড়ি ওসমানীনগরের ধীরারাই গ্রামে। গত ১২ই জুলাই পরিবারসহ দেশে আসেন তিনি। বড় ছেলে সাদিকুল অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করাতেই দেশে আসা। ৬ দিন ছিলেন ঢাকাতে। এরপর গত ১৮ই জুলাই নিজ এলাকা সিলেটের ওসমানীনগরে ফেরেন। বাড়িতে ওঠেননি। স্বজনরা জানান, লন্ডনে থাকার সময় বাসা খোঁজেন। তাজপুরের স্কুল রোডে তাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা অরুণোদয় পাল ঝলকের বাসায় দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। আর এই বাসাতে বসবাসের ৫ দিনের মাথায় তাদের পরিবারে নেমে এসেছে এই বিপর্যয়। স্বজনরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতের খাবার শেষে রফিক মিয়া তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম অন্যান্য কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে বাসার সুস্থ স্বজনরা ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী-সন্তানরা ঘরের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করেন।
খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষের দরজা ভেঙে রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে মাইকুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিয়া ইসলামকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে আইসিইউতে প্রেরণ করেন। বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে ডাক্তারের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত রফিক মিয়ার শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শোভা বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা। এ ছাড়া পিবিআই ও সিআইডির দু’টি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সেই বাসায় ৩টি শয়নকক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। যে কক্ষে প্রবাসী পরিবারের ৫ জন ঘুমিয়ে ছিলেন কক্ষটির আসববাপত্র এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। প্রবাসী হুছনারা বেগমের চাচাতো ভাই গোলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। কে বা কারা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার বোনের পরিবারের সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই।
নিহত রফিকুল ইসলামের ভায়রা ভাই সাজ্জাদ আহমদ জানান, ভায়রা রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসা দিতে গত ১২ই জুলাই দেশে ফিরেছেন। ঢাকা থেকে ফেরার পর শ্বশুর-শাশুড়িসহ অন্যদের দিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। তাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়ে এসেছেন বলে জানান। সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম বলেন, বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কীভাবে বিষক্রিয়া ঘটেছে তা তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়। যেসব নিকটাত্মীয় বাসায় ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। রাত পর্যন্ত কয়েকজনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।সুত্র-মানবজমিন