সাদাপাথরে ফের সক্রিয় ‘চোরচক্র’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২২, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
করোনাকালীন সময় থেকে সাদাপাথরে চোখ পড়েছে পাথরখেকো চোর সিন্ডিকেটের। দিনে নয়, রাত নামলেই তারা পাথর লুটপাটে নামে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৩ বছরে সাদাপাথর থেকে কয়েক কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে। এতে ভয়াবহ বন্যার আগে অনেকটা পাথরশূন্য হয়ে পড়েছিল সাদাপাথর। ঢলের পর আবারো উজান থেকে ভেসে আসা পাথরের সমারোহ ঘটেছে সাদাপাথরে। আর এতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোর সিন্ডিকেট। এদিকে সাদাপাথরে লুটপাট করা পাথর অভিযানে আটক করা নিয়ে প্রশাসন টালবাহানা করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সাদাপাথর সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট। শুধু সিলেট নয়, বাইরে থেকে অনেক দর্শনার্থী সাদাপাথরের টানেই সিলেটে আসেন। এবং ঘুরতে যান সেখানে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে সাদাপাথরের অবস্থান।
এক সময় পাথর লুটপাটের কারণে সাদাপাথরের অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমান সরকারের শাসনে গত ৭ বছর ধরে পাথর লুটপাট বন্ধ থাকার কারণে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির উজানে সাদাপাথরের স্তূপ জমে। ধলাইয়ের উৎসমুখ হওয়ার কারণে বছরে সব সময়ই উজানের পাথরগলা পানির স্বচ্ছধারা থাকে। এ কারণে এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট হয়ে ওঠে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাদাপাথরকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এলাকার সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কমংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও সাদাপাথরের ব্যাপারে আগ্রহী। এ কারণে তিনি কয়েক বার সাদাপাথর পরিদর্শন করেছেন। এদিকে করোনাকালের শুরু থেকে সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটপাট শুরু করেছে একটি চক্র। তারা প্রতিরাতেই পাথর লুটপাট করে।
ঈদের আগেও এক দফা লুটপাট করা হয়। এই লুটপাটের অভিযোগে গত শনিবার রাতে ৩০-৪০ নৌকা সাদাপাথর চুরি করে কলাবাড়ি মাহবুব এন্টারপ্রাইজ এবং ভাই ভাই স্টোন ক্রাশারে বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং গত রোববার সকালে মিল দু’টিতে অভিযান চালান। তবে অভিযানে পাথর জব্দ বা কাউকে আটক করা হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোলাগঞ্জ, পাড়ুয়া, কালাইরাগ, রাজনগর ও পুরান মেঘারগাঁও গ্রামের কয়েকজন মিলে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রের সদস্য প্রায় ৪০-৫০ জন। চক্রটি রাতের আঁধারে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নোঙর করে পর্যটন স্পটের পাথর চুরি করছে। চুরি করা পাথর বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ক্রাশিং প্ল্যান্টে। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় রাত নামার আগ থেকেই অবস্থান নেয় চক্রের কয়েকজন সদস্য। তারা অন্যদের তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও পুলিশের নিয়মিত টহলের পরও পাথর লুটপাট হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি পুলিশ ও বিজিবি’র সঙ্গে আঁতাত করেই সাদাপাথর লুট করা হচ্ছে। সূত্রগুলো বলছে, ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ এই অবৈধ কাজে জড়িত আছেন। তারা কমিশনের বিনিময়ে নৌকা ‘পাস’ দিয়ে থাকেন। তবে এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সাদাপাথরে পাথর চুরি বন্ধ করতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ নৌকাযোগেও টহল দিচ্ছে। পুলিশ পাথর জব্দ করছে। তবে যারা পাথর চুরি করছে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।