সিলেট মহানগর বিএনপিতে যে কারণে ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৩:০১,অপরাহ্ন ২৪ জুলাই ২০২২
সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বয়স প্রায় ১০ মাস। এই সময়ের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা ছাড়া দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি । এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে ক্ষোভ। তবে কমিটির নেতারা জানিয়েছেন; পরপর দু’দফা বন্যার কারণে পূর্ণ গতি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন বন্যা কমছে। কার্যক্রমে গতি বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে গত সোমবার রাতে মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়কের বাসায় এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে হট্টগোল হয়েছে। এ সময় অনেকেই কার্যক্রম গতিশীল করার দাবি তোলেন। সিলেট মহানগর বিএনপি’র পূর্বের কমিটি ভেঙে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। নতুন আহ্বায়ক করা হয় সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম জালালীকে।
সদস্য সচিব হন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।
কমিটি গঠনের সময় নতুন করে সম্মেলনের কোনো সময়সীমা বেঁধে না দেয়া হলেও বলা হয়েছিল স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মহানগর সম্মেলন আয়োজনের। এ কারণে দায়িত্ব পাওয়ার পর নেতারা মহানগর বিএনপি’র কার্যক্রম গতিশীল করতে কাজ শুরু করেন। ১০ মাসের মধ্যে মহানগর নেতারা ১৭টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এখন হাতে আছে ১৬ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি। যেকোনো সময় এ দুটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। এছাড়া- ৩, ৪, ৫, ৬, ১৩, ১৪, ১৫, ১৭নং ওয়ার্ডের কমিটি এখনো প্রস্তুত হয়নি। বলা হচ্ছে- এসব ওয়ার্ডের সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা জোরালো ভূমিকা না রাখার কারণে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় গতি আসছে না।
মহানগর নেতারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে মহানগর বিএনপি’র কমিটি গঠনের পর ৩ মাসে পরিকল্পনা সাজানো হয়। আর পরিকল্পনা মতো জানুয়ারি মাসে মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে ৯টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। একটি সাংগঠনিক টিমকে ৩টি ওয়ার্ডে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কমিটির নেতাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২৫০ জন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে একটি কমিটির খসড়া উপস্থাপনের কথা। কিন্তু ৮টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটির খসড়া এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। নেতারা জানান- ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ওয়ার্ড নেতারা পাড়া বা মহল্লাভিত্তিক কমিটি করবেন। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে সব প্রক্রিয়াই থমকে গেছে। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেক নেতাও।
সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানান, গত সোমবার রাতে আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পঙ্কির বাসায় মহানগর বিএনপির সভা হয়। এ সভায় ওয়ার্ড কমিটি গঠনের বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নেতারা। কেউ কেউ কাঠগড়ায় দাঁড় করান সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীকে। এ নিয়ে ওই সভায় হট্টগোলেরও সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য আহ্বায়কসহ সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। ওই সময় সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, কার্যক্রম গতিশীল না হওয়ার পেছনে এককভাবে কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই। অনেকেই সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্বশীল হয়ে কাজ না করে মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সভায় প্রশ্ন উত্থাপন করে বিতর্কের সৃষ্টি করছেন। ওই বৈঠকের পর মহানগর নেতারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকি থাকা ৮টি ওয়ার্ডের কমিটি জমা দেয়ার তাগিদ দেন। সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘মহানগর বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে কারো কারো মধ্যে মতবিরোধ হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। এরপরও সবার মতামতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দলের বৃহৎ স্বার্থে চলতে হবে। দু’একটা সাংগঠনিক টিম সময়মতো কাজ না করার কারণে এই জটের সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছি। যারা একটু পিছিয়ে আছে তাদেরকে সবাই সহযোগিতা করে আমরা ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চাই। এরপর সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি আরও জানান, সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্ভব নয়। আমরা যা করবো সম্মিলিতভাবে করতে চাই। এতে দলে যেমনি গতি আসবে, তেমনি নেতাদের মধ্যে দূরত্বও কমে আসবে।’ এদিকে সাংগঠনিক গতি কম থাকলেও পরপর দু’দফা বন্যায় সিলেট মহানগর বিএনপির কার্যক্রমে নেতারা পিছিয়ে ছিলেন না বলে দাবি করেন কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটে ত্রাণ কার্যক্রমে মহানগর বিএনপি’র নেতারা কাজ করেছেন।
কখনো দলগত, আবার কখনো এককভাবে সামর্থ্য মতো নেতারা বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘মাঝখানে রমজান ছিল। এরপর বন্যা। ৪-৫ মাস এমনিতেই চলে গেছে। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয় করে দুর্যোগে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরাও সক্রিয় হচ্ছি।