সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো হাজারো মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪২:২৪,অপরাহ্ন ২৩ জুলাই ২০২২
১৬ই জুন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন সিলেটের মানুষ। এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি পরিবেশ। এখনো বাড়ি ফিরতে পারেননি প্রায় ১২শ’র মতো মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রেই তারা বসবাস করছেন। ঈদও করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি নেমে গেলেও বাড়িঘর প্রস্তুত না থাকায় তারা ফিরতে পারছেন না। আবার অনেকেই হারিয়েছেন নিজ ভিটেও। এই অবস্থায় অনেকের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এখন যারা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন তারা হচ্ছেন কুশিয়ারা অববাহিকার উপজেলার বাসিন্দারা। সিলেট জেলা ভারপ্রাপ্ত ত্রাণ কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস জানিয়েছেন, সিলেট জেলার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ১২৮২ জন বানভাসী বসবাস করছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের দেখভাল করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বালাগঞ্জের ২২টিতে রয়েছেন ৪৫৫ জন, বিয়ানীবাজারের ৯টিতে রয়েছেন ২০৪ জন, দক্ষিণ সুরমার ৪টিতে ১৬৭ জন, ফেঞ্চুগঞ্জের ৪টিতে ১২১ জন, গোলাপগঞ্জের ৩টিতে ১১১ জন, ওসমানীনগরের ৬টিতে ২২৪ জন। তবে বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ ও সিটি করপোরেশন এলাকার সব আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি ফিরেছেন। সিলেটের প্রধান দু’টি নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। সুরমায় প্রবাহিত হয় পাহাড়ি ঢল। মেঘালয় রাজ্যের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে সুরমা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৬ই জুন প্রথমে সুরমায় ঢল আঘাত করেছিল। এতে করে ডুবে যায় সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাটসহ ৬টি উপজেলা। টানা এক সপ্তাহ বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল ওই উপজেলাগুলোতে। এরপর ধীরে ধীরে পানি নেমে যায়। তবে, উজানের ঢলের তীব্রতায় তছনছ করে দিয়েছে ওই ৬ উপজেলা। সুরমায় ঢল নামার এক সপ্তাহের মধ্যে আসামের ঢল বরাক দিয়ে কুশিয়ারায় ঢুকে তলিয়ে যায় অপর ৭টি উপজেলা। জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে পানি প্রবেশ করে একই সময়ে। এতে করে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুরমার পানি দ্রুত নামলেও কুশিয়ারার পানি ধীরে ধীরে নামে। এতে করে বন্যা পরিস্থতি দীর্ঘ হয়। টানা একমাসের অধিক সময় ধরে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল বিকালে প্রায় ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও ওসমানীনগরে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতিও অনেক হয়েছে। সিলেটের বালাগঞ্জের হাওর ও কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন পূর্ব পৈলনপুর। এবারের বন্যায় নদী তীরবর্তী এ ইউনিয়নের শতভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এখনো ১১টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। বাড়ি থেকে পানি নামলেও ঘরবাড়ি প্রস্তুত না হওয়ায় ওই পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে পারছে না। কিত্তে জালাল স্কুল ও ইউনিয়ন পরিষদে থাকা পরিবারগুলো এক মাসের অধিক সময় থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ১২৮টি পরিবার উঠেছিল। এরমধ্যে ১১টি পরিবার রয়ে গেছে। তাদের বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও বসবাসের উপযুক্ত না হওয়ায় তারা ফিরতে পারছেন না। সরকারিভাবে ৪৫টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণের টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বন্যা দীর্ঘ হওয়ার কারণে তার ইউনিয়নের মানুষদের বাড়ি ফিরতে বিলম্ব হয়েছে। এখন বাড়ি এবং সড়ক থেকে পানি নামলেও এলাকা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না বলে জানান তিনি। এদিকে, বালাগঞ্জে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো বন্যার্ত লোকজনের বসবাস রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন জানিয়েছেন, এক মাসের স্থায়ী বন্যায় বাড়িঘর বিপর্যস্ত হয়েছে। ধকল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে।