সিলেটে রোস্টারের বাইরে লোডশেডিং ভোগান্তি বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:৪১,অপরাহ্ন ২১ জুলাই ২০২২
সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে কুমারপাড়া পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের রোস্টার প্রতিদিন দুই বেলা। দুপুরে দেড় ঘণ্টা ও রাতে দেড় ঘণ্টা। সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা। প্রথম দিন মঙ্গলবার রোস্টার পালন করে লোডশেডিং করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। প্রতি দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে লোডশেডিং শুরু। এক ঘণ্টা পর ফের দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লোডশেডিং। সোয়া ৪টা থেকে আবার সোয়া ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং। এ কারণে বাণিজ্যিক এলাকা জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেল রোড, নয়াসড়ক সহ কয়েকটি এলাকা গতকাল দিনভর ছিল তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে।
পার্শ্ববর্তী চারাদিঘীরপাড়ের বাসিন্দা হারুন আহমদ জানিয়েছেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যে লোডশেডিংয়ের রোস্টার দেয়া হয়েছিল সেটি সবাই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু রোস্টারের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে; দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।’
সিলেটে রোস্টারের বাইরে কেন এত লোডশেডিং- এ প্রশ্নে বিদ্যুৎ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদিরের জবাব- ‘বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘সিলেটে বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে রোস্টার অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে অর্ধেক। এ কারণে বাকি ২০ ভাগ লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘বুধবার সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫৬ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে সকালে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭৮ মেগাওয়াট। বিকালে সেটিকে বাড়িয়ে ৯৪ মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা ২২৬ মেগাওয়াট। কিন্তু গতকাল বরাদ্দ দেয়া হয় ১১৪ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ এদিকে রোস্টারের বাইরেও লোডশেডিং হওয়ার কারণে ভোগান্তির অন্ত নেই সিলেটে। এতে করে জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কালিঘাট সহ কয়েকটি এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘ব্যবসা- বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে বিদ্যুতের উপর। যে রোস্টার দেয়া হয়েছে সেটি মেনে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা হচ্ছিলো। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তারা জানিয়েছেন, ‘রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেয়া হলে সিলেটে অতিরিক্ত লোডশেডিং হবে না। এতে করে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে তীব্র গরমে যেমনি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন তেমনি ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না।’ সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সিলেটে তার আওতাভুক্ত এলাকায় ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। গতকাল চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৬ মেগাওয়াট। এতে করে রোস্টারের বাইরেও লোডশেডিং হচ্ছে।’ এ ছাড়া সিলেট এখনো বন্যাকবলিত। বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হলে অন্তত রোস্টারের সময়েই লোডশেডিং করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেট নগরের পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় সমানতালে লোডশেডিং করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও বেশি পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রাহকরা। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বুধবার সকালে চাহিদা ছিল ৭২ মেগাওয়াট। সরবরাহ এসেছে ৩৮ মেগাওয়াটের মতো। এমন হলে তো ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতেই হবে।’ সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় জানান, ‘আমরা চাহিদার ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ পাচ্ছি। বিশেষত পিক আওয়ারে সরবরাহ সবচেয়ে কম মিলছে। মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ৮৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি মাত্র ৩০ মেগাওয়াট।
বুধবার সকালে চাহিদা ছিল ২৫ মেগাওয়াট। পেয়েছি ১৬ মেগাওয়াট।’ এই পরিস্থিতিতে সিলেট জেলা প্রশাসন জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন সভা সেরে নিচ্ছে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভাসহ অন্যান্য সভা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘এসব সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অংশ নিতে হয়। বিশেষ করে ইউএনওদেরকে আসতে হয় অনেক দূর থেকে, এতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু সভাগুলো ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় সেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।’ এদিকে রাত ৮টার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে কঠোর হয়েছে সিলেটের প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে নগরীর জিন্দাবাজার সহ কয়েকটি এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযানের সময় জেলা প্রশাসক সরকারি নির্দেশ পালনে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করেন।