পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তিতে দেড় লাখ প্রবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০২২, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শহীদ উদ্দিন (৪০)। আরব আমিরাত প্রবাসী। তার জন্মনিবন্ধনে থাকা নামের বানানের সঙ্গে পাসপোর্টের নামের অমিল রয়েছে। এটি সংশোধনের জন্য তিনি ওই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেছেন। কয়েক মাস পার হলেও তার এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এটি নিয়ে তার ওই দেশে ওয়ার্ক পারমিটে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য তিনি দূতাবাসে দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছেন। এমন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রবাসী পাসপোর্ট বহুমুখী জটিলতায় ভুগছেন। ৫ ধরনের সমস্যায় তারা আছেন। কারো জন্মতারিখ ঠিক নেই।
কারো নামের পরিবর্তন করতে হবে। কারো বাবার নাম ঠিক নেই।
কেউ আবার জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে চান। কেউ আবার ঠিকানা শুদ্ধকরণ করতে চান।
বিশেষ করে ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রসমূহে এই সমস্যায় পড়ছেন বেশি। ইউরোপে প্রায় ৮৫ হাজার বাংলাদেশি এমন সমস্যায় ভুগছেন। কেউ কেউ অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করে পাসপোর্ট সমস্যায় ভুগছেন। তারা নতুন করে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। কোনো কোনো প্রবাসী পুরনো পাসপোর্টের মেয়াদ থাকার পরও নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, স্পেন, গ্রেট বৃটেন, গ্রিস, সুইডেন, জার্মানিসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রবাসীরা এমন সমস্যায় ভুগছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্টে জট লাগে। করোনার প্রথম দিকে প্রায় দেড় লাখ পাসপোর্ট জট শুরু হয়। তখন থেকে এমআরপি ইস্যু বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শুধু ই-পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। দিন যতো যাচ্ছে ই-পাসপোর্টের চাহিদা বাড়ছে। সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত দেশে ই-পাসপোর্টে প্রায় ৪০ লাখ আবেদন পড়েছে। এরমধ্যে কর্তৃপক্ষ ৩৭ লাখ ই-পাসপোর্ট বিতরণ করেছেন। ডেলিভারির জন্য ঢাকাসহ সারা দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে ১ লাখ ৫৭ হাজার পাসপোর্ট রয়েছে। যেগুলো আজ অথবা কালকের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আর ১ লাখ ৫৭ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। এই ১ লাখ ৫৭ হাজার ই-পাসপোর্ট এখন জট বেঁধেছে। যেখানে গ্রাহকের নানা সমস্যার কারণে এই জট সৃষ্টি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, দেশে বা বিদেশে কেউ সঠিক তথ্য দিলে তার পাসপোর্ট নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন হবে। কেউ ভুল তথ্য দিলে হবে না। কেউ পুরনো পাসপোর্ট ফেলে যদি নতুন পাসপোর্ট নিতে চান তাহলে এটি নিয়মের মধ্যে পড়ে না। তবে মেশিন রেডিবল থেকে কেউ যদি ই-পাসপোর্ট নিতে চান তাহলে তার আবেদন গ্রহণ করা হবে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার এমআরপি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আইয়ুব চৌধুরী জানান, ‘প্রত্যেকদিন পাসপোর্ট অধিদপ্তর প্রায় ২৫ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট দিচ্ছে। পাসপোর্ট সংশোধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি আরও জানান, যে সব প্রবাসী পাসপোর্ট সংশোধন করতে চান তাদের সঠিক ডকুমেন্ট দিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করতে হবে। এখন যদি কোনো প্রবাসী বলেন যে, তার বয়স ৪০। চাকরির জন্য তার বয়স এখন পাসপোর্টে ৩০ করতে হবে। তাহলে তো এটি সম্ভব নয়। আইনের বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না।
পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্টের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রবাসীরা দিন দিন দূতাবাসগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেক প্রবাসী একাধিকবার আসছেন দূতাবাসগুলোতে। এতে তাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, এই সমস্যা বেশি দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে। বিশেষ করে ফ্রান্সে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এখন নতুন পাসপোর্ট ছাড়া সেখানে আবেদনকারীদের কাজের কোনো অনুমতি মিলবে না। আগের পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বর্তমান এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যে গরমিল থাকায় নতুনভাবে পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। তবে যাদের এমআরপি’র মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা নতুন করে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। প্রবাসীরা ই-পাসপোর্ট এখন বেশি করছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন কম পড়ছে বলে জানা গেছে।
মানবজমিন