অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল থেকে বিদায় নিলেন দুই জনবান্ধব ইউএনও
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২২, ৯:২২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় কুলাউড়া থেকে বুধবার (১৩ জুলাই) দুপুরে বিদায় নিলেন। তিনি পদোন্নতি পেয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন। অপরদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে ময়মনসিংহ এ যোগদান করেছেন ।
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ ত্যাগকালে ইউএনও ফরহাদ চৌধুরী বিদায় জানাতে এসেছিলেন উপজেলা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এসময় তিনি নিজেও কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদিয়ে গেলেন।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন, কুলাউড়া পৌরসভা ও উপজেলা অফিসার্স ক্লাব, গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে ইউএনও বিদায়ী ইউএনও ফরহাদ চৌধুরীকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিদায়ের আগে দুপুরে নবাগত ইউএনও মো. মাহমুদুর রহমান খন্দকারকে ফুল দিয়ে বরণ করে দায়িত্বভার অর্পণ করেন।
ভয়াবহ বন্যার পানিতে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা আংশিক নিমজ্জিত এরমধ্যে পায়ে গামবোট পরে নিয়মিত অফিস করেছেন, আর বন্যাদূর্গত মানুষের কাছে ছুটে বেড়িয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নিয়ে। বন্যার পানির সাথে চোখের পানি মিলেমিশে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় নিলেন কুলাউড়াবাসী প্রাণের মানুষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কতটা মানুষের মনের মনিকোঠায় মিশে গেলে এমন হৃদয় নিংরানো আর অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিদায় জানালো বন্যাদূর্গত উপজেলাবাসী।
করোনাকালিন বৈশ্বিক দূর্যোগের পুরোটা সময় দিবারাত্র ছুটে বেড়িয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। কর্মকালিন তিনটি বছরে হাসিমুখে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন, সেবা দিয়ে গেছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলো তাঁর কাছে মানুষ। দিনেরাতে যখনই কোন তথ্য চেয়েছেন তা পেয়েছেন। কিংবা কোন অনিয়মের খবর দিলে সাধ্যমত নিরসনের চেষ্ঠা করেছেন। কেউ অভিযোগ করতে পারবেন না উনার কাছ থেকে অশোভন আচরণ পেয়েছেন।
উনারমতো সংস্কৃতিমনা ক্রিড়াপ্রেমি মানুষগুলো হয়তো এমন মনখোলাভাবে সবাইকে আকৃষ্ট করতে পারেন। যাবারকালে সকলের মনে রেখাপাত করে চাপাকষ্টে হাত নাড়িয়ে চলে যান নতুন দায়িত্ব পালনে। গণমাধ্যমকর্মীরা লাইভ করেন আর সহকর্মীরা দূরে দাড়িয়ে হাত নাড়িয়ে শুভকামনা জানান, এটা অনেকটা রাজকিয় বিদায়ের মতো।
এসময় মনে করিয়ে দেয় আরেকজন ইউএনও’র কথা যিনি দু’দশক আগে শতাধিক বিদায় সংবর্ধণা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে অশ্রু ঝরিয়ে কুলাউড়া থেকে বিদায় নিয়ে ছিলেন মো. নিয়াজুল হক। তিনি একাধারে ইউএনও, এসি ল্যান্ড ও পৌর প্রশাসকের কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন দীর্ঘদিন। ছিলেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, সংবাদকর্মীদের অকৃত্রিম বন্ধু। প্রজাতন্ত্রের অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে অবসর নিয়ে বর্তমানে শান্তিময় জীবনে কাটাচ্ছেন। এখন আত্মীক সর্ম্পক রেখে যাচ্ছেন সবার সাথে।
চলে যাওয়ার সময় ফরহাদ চৌধুরী বলেন, প্রজাতন্ত্রের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের চেষ্ঠা করেছি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলমহলের সহায়তা পেয়েছি। তাই উপজেলার মানুষকে কখনো ভুলতে পারবো না।
অপরদিকে, শ্রীমঙ্গল উপজেলাবাসী অফুরন্ত ভালোবাসা ও অশ্রসিক্ত বিদায় নিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। গত ১০ মে সকালে উপজেলা পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনও নজরুল ইসলামকে বিদায় জানাতে আসেন স্থানীয় পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এসময় তিনিও কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদিয়ে গেলেন। নবাগত ইউএনও আলী রাজীর মাহমুদ মিঠুনকে বরণ করে দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন বিদায়ী ইউএনও নজরুল ইসলাম।
বিদায়বেলায় কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমি আমার ওপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনবান্ধব জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজন সবার সাথে সমন্বয় করে পালনের করেছি। দায়িত্ব পালনে সময় আমি উপজেলাবাসীর সহযোগিতা ও আকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছি। বিদায় বেলায় মনে হচ্ছে শ্রীমঙ্গল আমার একটি পরিবার। এখানকার সকল মানুষ আমার পরিবারের মতোই ছিলেন এবং থাকবেন। আমি এই মানুষগুলোকে কখনোই ভুলতে পারবো না। আত্মীক সম্পর্কের কারণেই তাদের ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি যেখানে থাকি শ্রীমঙ্গলবাসীকে চিরদিন মনে রাখবো।