সিলেট জেলা পুলিশের মানবিকতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২২, ১:৪৭ অপরাহ্ণ
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বানভাসি মানুষ। চারদিকে বন্যার্তদের হাহাকার। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার আর্তনাদ। এমন পরিস্থিতিতে মানবতার হাত বাড়িয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিলেট জেলা পুলিশ। জীবনবাজি রেখে প্রত্যন্ত-দুর্গম এলাকার বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। রান্না করা খাবার খাইয়ে বন্যাদুর্গতদের ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টাও চালাচ্ছে এ বাহিনী। মধ্য রাতেও থেমে নেই পুলিশের এমন মানবিক তৎপরতা।
দুর্দিনে অসহায় মানুষের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ায় পুলিশের প্রতি মানুষের ‘ভীতি’ কাটিয়ে গেছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে তারা ‘মানবিক’ একটি বাহিনী হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মানবিকতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকে ৯৯৯-এ কল দিয়েও সহযোগিতা নিচ্ছেন।
এবারে সর্বনাশা বন্যার শুরু থেকেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সিলেট জেলা পুলিশ। বেশ কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে প্রথম দিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পাশাপাশি নিজস্ব তহবিল হতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। দুর্গম এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমেও পুলিশের পক্ষ থেকে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।
সিলেট জেলা পুলিশের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলার সবকটি উপজেলায় থানা পুলিশের মাধ্যমে ২১ হাজার ৪৮৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪২ হাজার ৭০০ জন বন্যার্ত মানুষকে রান্না করা খাবার খাওয়ানো হয়েছে। উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪২৯ জনকে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ১৩ ট্রলার ও তিনটি স্পিডবোট ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি বন্যার্ত মানুষের নিরাপত্তায় ৩৩টি টহল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, পুলিশ সদস্যরা এভাবে আমাদের খোঁজখবর নেবে ভাবতেও পারিনি। ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে। এছাড়া আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তাও খোঁজখবর নিচ্ছেন।
গোয়াইানঘাটের ভিত্রিমহল উত্তরপাড়ার বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, আগে পুলিশকে দেখলে ভয় পেতাম। এখন তারা আমাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে আসছে। সুন্দর করে কথা বলছে। তাই এখন ভয় কেটে গেছে।
জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের বাসিন্দা মকছুদ আলী বলেন, রাস্তাঘাট পানির নিচে। বাজারে যেতে পারছি না। পুলিশের পক্ষ থেকে দুবার ত্রাণ পেয়েছি। নৌকায় করে বেশ কষ্ট করে তারা আমাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসছেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, পুলিশ সুপারের নিদের্শনায় জেলা পুলিশ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুরু থেকেই আমরা উদ্ধারকাজ চালানোসহ বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছি। আইজিপির পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকা দুর্গম ও যারা একেবারে ত্রাণ পাচ্ছে না খোঁজখবর নিয়ে তাদের হাতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিটি থানাকে এভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডেইলি বাংলাদেশ