সাদা পাথর লুটের মামলায় আসামিরা অজ্ঞাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৪:১২,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০২২
ওয়েছ খছরু:
সাদা পাথর। পর্যটন স্পট। ভ্রমণপিপাসু মানুষের পছন্দের স্থান। সরকারও এই স্থান সংরক্ষণ করতে চায়। কিন্তু পাথরখেকোদের লুটপাটের মহোৎসবে পাথর কমছে। ১০ দিনে ওই এলাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। পুলিশ গত শনিবার ভোররাতে নদীর পূর্বপাড়ে পাথর লুটের খবর পেয়ে অভিযান চালায়। সেখানে লুট করা পাথর পাওয়া গেলেও আসামিকে ধরতে পারেনি। পরে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় মামলা করে দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এ ঘটনার পরও সাদা পাথর লুট বন্ধ হয়নি।
পাথরখেকোরা রাতের আধারে নৌকাযোগে লাখ লাখ টাকার পাথর লুট করে নিয়ে হচ্ছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ। নয়নাভিরাম দৃশ্যপটের সাদাপাথর। উজান থেকে প্রবাহমান ঝরনার মধ্যে সাদা পাথরের সমারোহ থাকার কারণেই এলাকাকে সাদাপাথর বলে ডাকেন সবাই। আর পর্যটন স্পট হওয়ায় এটি সবখানেই পরিচিত। দিনের বেলা ওখানে থাকে পর্যটকদের ঢল। আর রাত হলেই পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদা পাথর ও পার্শ্ববর্তী বাংকার এলাকায় বর্তমান সরকারের শাসনামলে কোনো পাথর উত্তোলন করতে দেয়া হয়নি। পাথরখেকোরা ওই এলাকায় এক সময় পাথর লুট করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়েছিল। কয়েক মাইল এলাকায় বড় বড় পুকুরে পরিণত হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকাকে রুখতে সরকারের তরফ থেকে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিও লিজে দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে এখন পাথরের সমারোহ গোটা এলাকায়। আর পাথর ভেসে ওঠার কারণে পর্যটকদের কাছে ওই এলাকা আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। গত ঈদের আগে সাদা পাথর থেকে অবাধে পাথর লুট করা হয়। চিহ্নিত পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা প্রশাসনের সঙ্গে মিলেমিশে ওই এলাকা থেকে রাতের আধারে কয়েক কোটি টাকার পাথর লুট করে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে স্থানীয়রা প্রতিবাদী হওয়ার পর পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে ওই এলাকায় ফের পাথর লুটপাট শুরু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পাথরখেকো চক্রের সদস্য শাহাবুদ্দিন ও শ্রমিক সর্দার ফারুকের নেতৃত্বে এই এলাকায় পাথর লুট চলছে। তারা রাত নামলেই ইঞ্জিতচালিত ৫০-৬০টি নৌকা নিয়ে নামে ওই এলাকায়। ওখানে শ্রমিকরা হাত দিয়ে পাথর ভর্তি করে নিয়ে আসে। রাতের মধ্যে তারা ওই পাথরের চালান বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। এসব মালামাল রাতের মধ্যে ১০ নম্বর, কাটাগাঙ্গ, টুকেরবাজার, সুজনের বাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় নেয়ার পর ট্রাকে করে ধোপাগুলসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রাশার মিলে নিয়ে আসে। এরপর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করা হয়। এজন্য নৌকা প্রতি বিজিবির নামে ১ হাজার ও পুলিশের নামে ২ হাজার টাকা উত্তোলন করে দালাল চক্র। পাথর লুটপাটের ঘটনার অভিযোগ যায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের কাছেও। পাথর লুটের খবর পেয়ে গত শুক্রবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালাম মিয়া ধলাই নদীর পূর্বপাড়ে অভিযান চালান।
অভিযানের সময়ই তারা কলাবাড়ির টু স্টারের প্রধান সড়কের উপর ট্রলি ও নৌকা ভর্তি পাথর জব্দ করেন। তবে, অভিযানের খবর পেয়ে পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। পরে কর্মকর্তাদের নির্দেশে এসআই শফিকুল ইসলাম ওই পাথর জব্দ করেন। রাতেই তিনি এ ব্যাপারে থানায় এজাহার দাখিল করেন। তার দেয়া এজাহার কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় কোনো আসামির নাম দেয়া হয়নি। অজ্ঞাতদের আসামি করেই মামলা দায়ের করা হয়। এসআই শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পাথরের সঙ্গে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ কারণে নাম দেয়া হয়নি। তদন্তে নাম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে, মামলা করা হলেও পাথরখেকোদের লুটপাট বন্ধ হয়নি। প্রতিরাতেই ওই এলাকা থেকে পাথর লুট করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া জানিয়েছেন, ওই পাথর সাদাপাথর থেকে লুট করা হয়েছে কীনা জানা নেই। পার্শ্ববর্তী বাংকার এলাকা থেকে আনা হতে পারে। দুটি এলাকায়ই পাশাপাশি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে আহ্বান জানানো হয়েছে।