পারাবত ট্রেনে অগ্নিকান্ড : ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ পাওয়ার কার মেরামত করে চলছিল!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৪:০৬,অপরাহ্ন ১৩ জুন ২০২২
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রহস্যজনক আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কারের স্বাভাবিক চলাচলের মেয়াদ ছিল না। লোকোশেডে থাকার কথা থাকলেও সেটি চালানো হচ্ছিল মেরামত করে। ফলে টানা সার্ভিস দিতে গিয়ে পাওয়ার কারটিতে আগুন লাগে। এছাড়া পাওয়ার কারে ছিল না অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাও। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এবং রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আন্তনগর পারাবত ট্রেনে অগ্নিকান্ডে তিনটি বগি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। রোববার (১২ জুন) সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চককবিরাজী দুর্ঘটনা এলাকায় পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। প্রাথমিক তদন্তে এসব ধরা পড়ে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, আমদানির পর ২০১৭ সালে পাওয়ার কারটি চলাচলের ট্রেনে জন্য সংযুক্ত করা হয়। একটি পাওয়ার কার সর্বোচ্চ ২০ হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত স্বভাবিক সার্ভিস দিতে পারে। সেই হিসাবে পারাবত ট্রেনের পাওয়ার কারটি লোকোশেডে ফেরতযোগ্য ছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুমার পোদ্দার বলেন, ‘আমদানি করার পর যে কোনো পাওয়ার কার রেলওয়েতে যুক্ত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ২০ হাজার ঘন্টা পর্যন্ত স্বভাবিক সার্ভিস দিতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পারাবত ট্রেনে যুক্ত পাওয়ার কারটি ২০১৬-১৭ সালের দিকে আমদানি করা। সেদিক থেকে ২০২১ সালেই এটি লোকোশেডে ফেরত যাওয়ার কথা ছিল।’
রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তনগর ট্রেন প্রতিদিন আপ অ্যান্ড ডাউনে চলাচল করে। সেই হিসেবে প্রতিটি পাওয়ার কার সপ্তাহে ৬ দিন প্রতিদিন ১৪ ঘন্টা করে সার্ভিস দেয়। আর বর্তমানে প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে একটি পাওয়ার কার ২০ হাজার ঘন্টাও চলার কথা নয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. খায়রুল কবির বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাবে না, একটু সময় লাগবে। আমরা পরীক্ষানিরীক্ষা করছি। সবকিছু দেখতে হচ্ছে, বিভিন্ন মেজারমেন্ট নিতে হবে। ওই ট্রেনে দায়িত্বরত কর্মকর্তার ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে স্টেটমেন্ট নিতে হবে, সেটিতো মেকানিক্যাল বিষয়। কোন জায়গায় কি ছিল, কিভাবে হতে পারে, সবকিছু দেখার পর বলা যাবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ।
পারাবত ট্রেনের পরিচালক মো. ইসমাইল বলেন, ট্রেন ঢাকা ছেড়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার এলাকায় আসার পর ট্রেনের হোস পাইপে সমস্যা দেখা দেয়। হোস পাইপ মেরামত করে ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি শমসেরনগর স্টেশন অতিক্রম করার পর ট্রেনের পাওয়ারকার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে পাওয়ারকারের ভেতর তেলের ট্যাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান মাস্টার মো. মহিবুর রহমান জানিয়েছেন. অগ্নিকান্ডে পারাবত এক্সপ্রেসের পুড়ে যাওয়া তিনটি বগি কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনে রাখা হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো পরির্দশন করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্ত:নগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেসে গত শনিবার (১১ জুন) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরে চককবিরাজী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। ওই পথে প্রায় চার ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে ওই দিন বিকালেই বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।