সিলেটে থামছেনা পাহাড়ের কান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৪:৫৪,অপরাহ্ন ০৬ জুন ২০২২
সুজিত দাশ:
বর্ষা মৌসুম এলেই সিলেটের পাহাড়-টিলা থেকে ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ। অতি বৃষ্টির ফলে টিলা ধসে নিয়মিত শুনা যায় প্রাণহানির খবর। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে জৈন্তাপুরে পাহাড় ধসে একই পরিবারের চারজন মারা যাওয়াসহ আহত হয়েছেন আরও আট জন।
জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে বাড়ির পাশের টিলা ধসে পড়লে দুই ভাই রফিক আহমদ ও জুবের আহমদের ঘর চাপা পড়ে। এ সময় মাটি চাপা পড়ে জুবের আহমদ (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী সুমি বেগম (৩০) ও ছেলে সাফি আহমদ (৫) মারা যান। মাটি চাপা পড়ে প্রাণ হারান রফিক আহমদের স্ত্রী মোছা শামীমা বেগম (৪৮)। আহতরা হলেন, আব্দুল করিম (৮০), খয়রুন নেছা(৭৫), মাওলানা রফিক আহমদ (৬০), ফাইজা বেগম(২০), লুৎফা বেগম(২০), রাফিউল ইসলাম (১০), মেহেরুন নেছা (৪০) এবং হাম্মাদ (৩) ৷
শুধু জৈন্তাপুর নয় বর্ষা আসলেই পাহাড় ও টিলা ধসের এসব খবর পাওয়া যায় সিলেটের বেশকিছু এলাকায়। তারমধ্যে সদর উপজেলাসহ জেলার গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট অন্যতম। এসব উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় চার শতাধিক পাহাড়-টিলা রয়েছে। আর এই পাহাড়-টিলার আনাচে-কানাচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন শত শত মানুষ। দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল বিভিন্ন নির্দেশনা আসে ও মাইকিং করতে দেখা যায়। অন্যতায় কারোর কথার মূল্য থাকেনা এসব এলাকায়। অনেক সময় টিলার বাসিন্দারা নিজেকে সরাতেও চান না।
এদিকে সিলেট সদর উপজেলার ব্রাহ্মণশাসন টিলা, মজুমদার টিলা, মুক্তিযোদ্ধা টিলা, জাহাঙ্গীরনগর টিলাসহ আশপাশের দুসকি, নালিয়া, ভাটা, তারাপুর চা বাগান, বালুচর, শাহপরান ও খাদিমপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক টিলা রয়েছে। এসব টিলায় প্রায় ৮-৯ হাজার লোক বসবাস করেন। দিন দিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেখানে বেশিভাগই নিন্মবিত্তরা বসবাস করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব টিলায় অনেকে জায়গা কিনে ঘর বানিয়েছেন, অনেকে আবার ভাড়া হিসেবেও থাকছেন। তবে এসব জায়গা ইজারা বা বিক্রির কোন অনুমোদন বা বিধান নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের আলীবাহার চা বাগান ও দুসকি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব জায়গায় চুক্তিভিত্তিতে অনেকেই কাঁচা ও খুপরি ঘরের পাশাপাশি আধাপাকা ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। অনেকেই আবার টিলা কেটে রাস্তা বানিয়েছেন। টিলা কাটা বা ধসে পরা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না কেউই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা জানান, শহরে অতিরিক্ত ভাড়া তাই এখানে বাড়ি বানিয়ে থাকছি। টিলা ধসে দুর্ঘটনা ঘটলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে এখানে টিলা ধসে পড়ার কোন রেকর্ড নেই। আমরা জেনে-বুঝেই এখানে এসেছি।
জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ জানান, চিকনাগুল ও চাইরখাটাসহ উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক পরিবার টিলায় বাড়ি বানিয়ে বসবার করেন। আর টিলা কেটে বাড়ি বা রাস্তা তৈরির জন্য এখানে ঝুঁকি বেশি থাকে। আমরা তাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। অনেকে আছেন যারা টিলা ছেড়ে আসতে চান না বা ছাড়তে রাজি নন তাদের জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কি না সেটা নিয়েও আমরা ভাবছি। সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে নিহতদের ২০ হাজার ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জৈন্তা বার্তা