চট্রগ্রাম ট্রাজেডি: ‘আমার পুয়ার পুড়া মুখ দেখমু জানলে চাকরিত দিতাম না’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২২, ৮:২৪ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ফেসবুকে প্রথম লাইভকারী তরুণ অলিউর রহমান নয়নের বাবা আশিক মিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে কেউ কান্না থামাতে পারছে না। বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার পুয়ার (ছেলের) পুড়া মুখ দেখমু জানলে, তারে চাকরিত দিতাম না। আমার পুয়ারে আমি কিলা মাটি দিতাম? তার টেকায় সংসারের অভাব কিছুটা দূর অইছিল। বাকি হুরুতা (সন্তানদের) লইয়া কিলা দিন কাটাইতাম? আমার সব শেষ।
অলিউর রহমান নয়ন ছিলো পরিবারের বড় সন্তান। বাবা দিনমজুর। সংসারে অভাব অনটন থাকায় পড়ালেখা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারের হাল ধরতে এলাকার বড় ভাইদের সহায়তায় চাকরি নেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কমটেইনার ডিপোতে। সেখানে যা বেতন পেতো তা পাঠিয়ে দিতেন বাবার কাছে।
সোমবার (৬ জুন) সকালে তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি কুলাউড়ায় এসে পৌছালে স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম শুরু হয়। পরে দুপুর ২ টায় জানাযার নামাজ শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।
এদিকে শনিবার ( ৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি নিজের ফেসবুকে লাইভ করছিলেন অলিউর রহমান নয়ন (২০)। লাইভ চলাকালীন হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। কয়েক মিনিট পর লাইভও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিপোর বাইরে থাকা সহকর্মীরা খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
শনিবার নয়নের সহকর্মী রুয়েল বলেন ও আমার সঙ্গে কাজ করে। আমরা একসঙ্গেই থাকি। কত করে বললাম আমাদের সঙ্গে বাইরে চলে আসতে। কিন্তু সে এল না। লাইভ করার জন্য আগুন লাগা কন্টেইনারের পাশেই থেকে গেল। আমরা নিজের প্রাণ বাাঁচাতে পাশের টিলায় গিয়ে আশ্রয় নিই। রোববার দুপুর ১২টার দিকে রুয়েলের কাছে খবর আসে নয়নের ক্ষতবিক্ষত লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে।
নয়নের মারা যাওয়ার খবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়-স্বজনরা বিলাপ আর আহাজারি করছেন। স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে এসেছে। তার বাবা নিকটাত্মীয়দের নিয়ে লাশ আনতে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছেন।
জানা যায়, নয়নের মায়ের কয়েক বছর আগে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন মা ও বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন নয়ন। সংসারে অভাবের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকরিতে যায়। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করত। তাই দিয়ে সংসার চলত তাদের।
অলিউরের সৎমা হাসিনা বেগম জানান, অলিউরের সঙ্গে ফোনে শনিবার দুপুর ২টায় সর্বশেষ কথা হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে তার বাড়িতে আসার কথাও ছিলো।