স্বপ্ন দেখানো হৃদয় এখন পরিবারের বোঝা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২২, ১১:৫৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো ছিল হৃদয় হোসেন। তাই অনেক কষ্ট হলেও ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন দরিদ্র বাবা। আশা ছিল লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি করে তিনি সংসারের হাল ধরবেন।
কিন্তু ভাগ্যের চরম নির্মমতা। চাকরি করা তো দূরে থাক; মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দি জীবনযাপন করছেন হৃদয়। চিকিৎসায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রংমিস্ত্রি তানজের আলী মীরের ছোট ছেলে হৃদয় হোসেন মীর।
বাবা তানজের আলী জানান, ২০১৬ সালে গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন হৃদয়। পরে জেলা শহরের একটি বেসরকারি কলেজে তাকে ভর্তি করা হয়। ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার আগে বাগবিতণ্ডার জেরে কলেজের কয়েক সহপাঠি তাকে মাথায় আঘাত করে। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন হৃদয়।
বরিশালে দীর্ঘ চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই বছরই এইচএসসি পরীক্ষা দেন এবং পাসও করে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চার মাস আগে ঢাকায় যান চাকরির সন্ধানে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! সেখানেও লোকজনের কাছে মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হন। সেই থেকে আবারও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন হৃদয়।
হৃদয়ের মা তাজনেহার বেগম জানান, বেঁধে না রাখলে হৃদয় সবাইকে মারধর করে। সবকিছু ভেঙে ফেলে। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।
ছেলের এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অসহায় এ মা। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে গরু বিক্রি, এনজিও থেকে ঋণ এবং স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
ছেলেকে এ অবস্থায় দেখে ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না বাবা তানজের আলী। সংসারে অভাব আরও জেঁকে বসেছে। অসহায় পরিবারটির সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এ মুহূর্তে হৃদয়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তবে ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।