‘বাবা আমার পা উড়ে গেছে’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৭:২৩,অপরাহ্ন ০৫ জুন ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় বাবাকে ফোন দেন মমিনুল। ২৭ বছর বয়সী মমিনুল বলেন, ‘বাবা এখানে কিছুক্ষণ পরে পরে ব্লাস্ট হচ্ছে।’ এরপরই ফোন কেটে যায়। অনেক চেষ্টা করেও মমিনুলকে ফোনে আর পাচ্ছিলেন না ফরিদুল। এর ১০ মিনিট পরই আবার ফোন। শুনতে পেলেন সেই ভয়াবহ খবর।
শনিবার মাঝরাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ফরিদুল ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের বিষয়ে বলে চলেন, ‘দ্বিতীয়বার ফোনে মমিনুল বলেন, ‘বাবা আমার একটা পা উড়ে গেছে। আমাকে কলমা পড়ে সাফ করে দেন। ছেলের আর্তচিৎকার শুনতে পারছিলেন বাবা। পঞ্চাশোর্ধ ফরিদুল বলেন, হাতে ফোন রেখেই মমিনুল বলছিলেন, আমি মাটিতে পড়ে গেছি আমাকে কেউ একটু তুলে দাও’। এসময় কেটে যায় ফোনের লাইন। ওটাই ছিল ছেলের সঙ্গে শেষ কথা।
চমেক লাশঘরের সামনে কাঁদতে কাঁদতে ছেলের সঙ্গে শেষ কথার বিষয়ে বলছিলেন তিনি।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে মাত্র তিন মাস আগে কাউন্টারে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন মুমিনুল।
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তাদেরই একজন মমিনুল। তার খালাতো ভাই তায়েব চমেক হাসপাতালে বলেন, তিন মাস আগে মহসিন কলেজ থেকে ইকোনমিক্সে অনার্স শেষ করে চাকরি শুরু করে মমিনুল। আজকে রাত ৮টার দিকে ডিপোতে যান তিনি।
ফরিদুল জানান, মমিনুলের সঙ্গে কথা শেষে তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকা নিজের স্বজনদের ফোন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে যেতে বলেন। পরে তার চাচা খোরশেদ আলম হাসপাতালে এসে ভাতিজার লাশ দেখতে পান। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মুমিনুল মেজ।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় চার শতাধিক ব্যক্তিকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সহাকারী পরিচালক রাজীব পালিত।