সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে নির্বাচন : বিদ্রোহীদের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২২, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
বিদ্রোহীদের মুখোমুখি সিলেটের বিয়ানীবাজারের পৌর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়েও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ঘরানার আরেক প্রার্থীর মুখোমুখি হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। ১৫ই জুন গোলাপগঞ্জ উপজেলা উপ-নির্বাচন ও বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্রয়াত চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরীর ছোটো ভাই মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম ও বিয়ানীবাজারে বর্তমান মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুশ শুকুর। গোলাপগঞ্জে বিএনপি কিংবা অন্যান্য দলের কোনো প্রার্থী নেই। নৌকার প্রার্থী এলিমের মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ভিপি শফিক উদ্দিন। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে এবং জমেও উঠেছে। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী ছিলেন একাধিক।
কিন্তু প্রবীণ নেতাদের হটিয়ে এলিম নিয়ে আসেন নৌকার মনোনয়ন। এতে করে স্থানীয় নেতারা মনক্ষুণ্ন হলেও তারা বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। তবে দলের অনেকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে থাকলেও ভোট প্রার্থনায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই। বরং অনেকেই ভেতরে ভেতরে শফিক উদ্দিনকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দিন দিন শফিক উদ্দিনের অবস্থান ভালো হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত শফিক উদ্দিনের ওপর শাস্তির খড়গ নামেনি। শফিক উদ্দিনের সমর্থকরা জানিয়েছেন, তাকে বহিষ্কারেরও সুযোগ নেই। তিনি পদ-পদবি ব্যবহার করেননি। এ উপজেলায় বিএনপির কিংবা জাতীয় পার্টির কোনো নেতাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেননি। বিয়ানীবাজার পৌরসভায় জমে উঠেছে নির্বাচন। মোট ১০ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই চারজন। বর্তমান মেয়র আব্দুশ শুকুর ছাড়াও আরও তিনজন রয়েছেন। এরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস টিটু, বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুকুল হক ও বিয়ানীবাজার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহবাব হোসেন সাজু। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ৩ মেয়র প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক মনোনীত দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ওই তিন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হলো। তবে বহিষ্কারেও পিছু হটছেন না বিদ্রোহীরা। বহিষ্কৃত নেতা ও পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস টিটু জানিয়েছেন, এক সময় বিয়ানীবাজার পৌরসভারকে প্রশাসক দিয়ে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। তখন উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা করে তিনি নির্বাচনের প্ল্যাটফরম তৈরি করেন। এতসব অবদান থাকার পরও দল তাকে প্রথমবার মনোনয়ন না দিলেও আশ্বস্ত করে বলেছিল পরবর্তীতে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এবারো তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন। যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন বিয়ানীবাজারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে তার পক্ষে জনগণের সমর্থন থাকায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
যা আছে হলফনামায়: সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে কারো বিরুদ্ধেই কোনো মামলা নেই, আগেও ছিল না। প্রার্থীদের মধ্যে ৩ জন স্বশিক্ষিত, একজন পঞ্চম শ্রেণি পাস। নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত প্রার্থীদের হলফনামা থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই মো. তফজ্জুল হোসেন, মো. আব্দুস সবুর ও মো. অজি উদ্দিনের। এছাড়া মো. সুনাম উদ্দিন পঞ্চম শ্রেণি পাস। বাকিদের মধ্যে মো. আব্দুস সামাদ আজাদ এমএসএস পাস, মো. আব্দুল কুদ্দুছ ও মোহাম্মদ আবুল কাশেম বিএ পাস এবং মো. আব্দুস শুকুর, ফারুকুল হক ও আহবাব হোসেন এইচএসসি পাস।
এদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঞ্জুর কাদির শাফি স্বশিক্ষিত। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সফিক উদ্দিন এইচএসসি পাস। মঞ্জুর কাদির শাফির নিজের নামে ১০ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ৮৩০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সফিক উদ্দিন সর্বমোট ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক। শাফির বার্ষিক মোট আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬ হাজার ৮১১ টাকা। অপর প্রার্থী সফিকের বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।