খোলস ভাঙছে সিলেট বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২২:৩০,অপরাহ্ন ৩০ মে ২০২২
একটা সময় সিলেট বিএনপি নেতারা রাজপথে দাঁড়ানো তো দূরের কথা ঘরেও টিকতে পারেননি। মামলার পর মামলায় বিপর্যস্ত হয়েছিলেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। শ’য়ে শ’য়ে মামলায় আসামি হয়েছিলেন নেতারা। বহু নেতাকর্মী চলে গেছেন প্রবাসে। বিএনপি’র সেই দৃশ্যপট এখন পাল্টাচ্ছে। খোলস ভাঙছেন নেতারা। রাজপথ দখলের নেশায় মেতে উঠেছেন সেক্ষেত্রে বিএনপির নেতারা ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন যুবদল ও ছাত্রদলকে। গত শনিবার সিলেটে যুবদল ও ছাত্রদল শোডাউন করেছে। এই শোডাউন নিয়েও ছিল নানা কানাঘুষা। কয়েকদিন আগে রাজপথে ছাত্রলীগের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল ছাত্রদল।
ফলে এক ধরনের ভীতি কাজ করেছিল নেতাকর্মীদের মধ্যে। সেই ভীতি কাটাতে শনিবার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। শনিবার দুপুরে মিছিল বের করবে যুবদল ও ছাত্রদল। স্পট নগরীর জিন্দাবাজার। হঠাৎ মাঠে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র নেতা আজমল বক্ত সাদেকসহ কয়েকজন। জিন্দাবাজারে প্রকাশ্যেই ছিলেন তারা মাঠে। এমন সময় সেখান থেকে মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিপুলসংখ্যক কর্মীও। তবে, তার আগেই যুবদল পুরানলেন এলাকা থেকে মিছিল বের করে। যুবদলের মিছিলে বিপুলসংখ্যক নেতাদের উপস্থিতি ছিল। বাধা আসেনি। পুলিশও ছিল নিরপেক্ষ ভূমিকায়। ছাত্রলীগও মাঠে নামেনি। কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে সিলেট ছাত্রদলের কর্মসূচি। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজনীতি ছিল সম্প্রীতিময়। বর্তমানে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, কর্মসূচিতে মুখোমুখি না হলে বিএনপি সহনশীল রাজনীতি করলে কোনো অঘটন ঘটবে না। তারা উচ্ছৃঙ্খলতা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, বিরোধী দলে আসীন হওয়ার পর ২০১২ সালে এম ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার পর আন্দোলন থেকে মামলা শুরু হয়।
এরপর ২০১৩, ২০১৪, এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ নানা ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় আসামি হয়েছে। কয়েকশ’ মামলায় আসামির সংখ্যা হবে ৭-৮ হাজার। বিএনপির তৃণমূলের নেতারাও ঘরে বসে মামলার আসামি হয়েছেন। তবে- আশার কথা হলো, বর্তমানে মামলার সংখ্যা কমে এসেছে। অনেক মামলাই আদালতে বিচারের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। ফলে নেতাকর্মীরা গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। একইসঙ্গে সিলেট বিএনপির নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সিলেট বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা হয়েছে। মহানগর বিএনপিরও আহ্বায়ক কমিটি নতুন করে সম্মেলনের কাজ চালাচ্ছে। উনিশ বছর পর পুনর্গঠন হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল। সাবেক ছাত্রনেতারা যুবদলের নেতৃত্বে আসায় এখন যুবদল আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙা। রাজপথে কর্মসূচি পালনে যুবদল সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। জেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা কমিটির পুনর্গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের স্থান দেয়া হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে যারা নেতৃত্বে এসেছেন তারা অনেকেই ত্যাগী। এ কারণে আন্দোলন সংগ্রামে নেতারা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপির আন্দোলন সাধারণ মানুষের আন্দোলন। এ কারণে এখন বিএনপি’র কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। মানুষ চায় পরিবর্তন। এই পরিবর্তন আন্দোলনে সিলেটের বিএনপির নেতারা নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি জানান, বিগত দিনেও আন্দোলনে ছিলাম, এখনো আছি, আগামীতে সক্রিয় থাকবো। সিলেট বিএনপি মামলায় বিপর্যস্ত হলেও আন্দোলন নির্ভয়ে চালিয়ে যায়। এদিকে, বর্তমানে মহানগর বিএনপিকে সাজানোর কাজ চলছে। পাড়া ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠনে ব্যস্ত নেতারা। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সিলেট বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী সক্রিয় হচ্ছে। ফলে আশাবাদী হয়ে উঠছেন নেতাকর্মীরা।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সিলেটের নেতাকর্মীরা প্রায় সকলেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পিছনে ফেরার যেহেতু সুযোগ নেই, সেজন্য সবাই আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মানুষের মুক্তির জন্য এই আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তিনি দাবি করেন, পুলিশ এখন আর আগের মতো ভূমিকায় নেই। নিরপেক্ষ ভূমিকায় যাচ্ছে পুলিশ। এ কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্ভয়ে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছেন।