জুড়ির যে ইউনিয়নে এখনও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নেই : দূর্ভোগে প্রবাসী ও শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৭:৩১,অপরাহ্ন ২৯ মে ২০২২
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুড়ীর উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নটি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার পাশে অবস্থিত। সীমান্ত এলাকার এই ইউনিয়নের লাঠিটিলা, নালাপুঞ্জি, লালছড়া, ডোমাবাড়ী, লঙ্গর খানা, রুপাছড়া সহ কয়েকটি গ্রামের ১০-১২ হাজার মানুষেরর বসবাস। কিন্তু এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত নেটওয়ার্ক নেই, আর নেই অন্যান্য ডিজিটাল সেবা।
বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারেনট সেবা এখন পৌছে গেছে প্রতিটি ঘরে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে জুড়ীর এই ইউনিয়নটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। করোনা কালে সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখানকার শিশুরা ছিল নেটওয়ার্ক থেকে বঞ্চিত।
এলাকাবাসীর দাবী, তাদের সন্তান যেন জরুরি নেটওয়ার্কের এই সুবিধাটি পায়। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেই মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানে ঘরে বসে ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছে। অথচ এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনসাধারণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয়না জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইলের নেট ওয়ার্ক সেবা থাকলে ও এসব এলাকায় কোন টাওয়ার নেই। নেটওয়ার্ক দূর্ভোগের কারণে একাধিক বার জুড়ী উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিত দাবি করলেও মিলেনি কোন সাড়া। এমনকি বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বরাবর লিখিত আবেদন দিলে উনার সুপারিশে বিটিআরসি বরাবর চিঠি পৌছালে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ডিজিটাল যোগে বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্য এটি দূর্ভোগ তৈরী করেছে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান বলেন, দেশে আমার পরিবার রেখে আমি প্রবাস জীবন কাটাচ্ছি। দুঃখের বিষয় মাসে একবারও পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলতে পারছি না। আমরা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের জন্য নিজের পরিবারের জন্য জীবিকা অর্জন করতেছি। আজ আমরা নেটওয়ার্কের এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া যেন আমাদের গ্রামের মানুষ পায়। আমরা যেন প্রবাসে থেকে অন্তত পরিবারের সাথে একটু কথা বলতে পারি। এই ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ও বেসরকারী নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর কাছে আমরা প্রবাসীরা জোরদাবি জানাচ্ছি।
প্রবাসীদের নিয়ে তৈরী সংগঠন প্রবাসী কল্যাণ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, আমরা কি শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের জনগণ না? আমরা মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান চাই!
তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার যখন কাজ করছে, ঠিক তখনি ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা থেকে বঞ্চিত আমরা।
শিক্ষার্থী কিবরিয়া আহমদ বলেন, নেটওয়ার্কে যতো ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা আছে তা আমরা পাচ্ছি না। আমাদের নেটওয়ার্কের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি মোবাইল টাওয়ারের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবো। পাশাপাশি আমাদের এলাকার প্রবাসীদের সুবিধা হবে।
স্থানীয় কৃষক উন্নয়ন সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকার চাহিদা পূরণ করে প্রতিবছরে প্রায় ৩০ লক্ষ জাম্বুরা, ৫০ লক্ষ কমলা, ২৫ লক্ষ কাঁঠাল ও ৫ লক্ষ ছড়া কলা সহ অনেক রকমের ফসল রাজধানী ঢাকা চিটাগাং সহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় পাঠাই। তবে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া পেলে আমরা এটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা যেন ডিজিটাল প্রযুক্তি নেটওয়ার্কের সুবিধা পাই।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম বলেন, আমার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রধান সমস্যা মোবাইল নেটওয়ার্ক। তারা নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান চায়। এখানে অনেক প্রবাসী পরিবারের দাবি মাসে একবার হলেও তারা তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যের সাথে কথা বলার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সিলেট অফিসের জোনাল অফিসার (অপারেশন স্টেশন) খুরশেদ আলম বলেন, জুড়ীর কিছু জায়গায় টাওয়ার নেই, আগামী জুনে নতুন প্রজেক্ট থেকে এসব টাওয়ারের জন্য কাজ শুরু করা হবে।