বন্যার পানি একদিকে কমছে অপরদিকে বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২২, ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলায় পানি কমে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অপরদিকে উজান অঞ্চলের পানি ভাটির উপজেলাগুলোতে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত ছিল। এর মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজারের পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। এরপর ছিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা।
গত তিন দিন ধরে বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামা বন্ধ থাকায় এ তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
অপরদিকে গত তিন দিন ধরে সুনামগঞ্জের ভাটির উপজেলা দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুরের নদ-নদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান ও শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব জানান, দিরাই ও শাল্লার নদ-নদীও হাওড়ে তিন ধরে পানির চাপ বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুটি উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা বৈঠক করেছেন। জগন্নাথপুর উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল বন্ধ থাকায় জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। সোমবার বিকাল ৩টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিনি বলেন, সুরমায় পানি কমলেও জেলার দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলার নদ-নদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর দিকের পাড়া-মহল্লা থেকে বন্যার পানি নামলেও দক্ষিণ দিকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে পানি নামছে ধীরগতিতে। শহরের কালীপুর, হাসনবসত, ওয়েজখালী, পাঠানবাড়ি এলাকার অনেকের বাড়িঘরে এখনো হাঁটুপানি রয়েছে। শহরের কালিপুর এলাকার চলাচলের রাস্তায় এখনো কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি থাকায় এলাকার মানুষজন শহরে যাতায়াত করতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ সবাই ছোট ছোট নৌকা করে আসা যাওয়া করছেন।
এছাড়া বড়পাড়া, মল্লিকপুর, শান্তিবাগ, পশ্চিম নতুনপাড়া, পশ্চিম হাজীপাড়া, হাসননগর, সুলতানপুরসহ পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এলাকাগুলোতে এখনো বন্যার পানি রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সহায়তায় ১৭৫ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা ও ৪ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২০টি। এতে প্রায় ৩০০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলা সদর বাদে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা চলমান বন্যায় বেশি আক্রান্ত ছিল। এসব এলাকা থেকে ধারাবাহিকভাবে অনেক পানি নামছে। অপরদিকে নতুন করে দু-তিনটি উপজেলায় পানি বাড়লেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।