‘১২০ টাকা মজুরি পাইয়া কিভাবে সংসার চালাবো?’
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৬:০২,অপরাহ্ন ২৩ মে ২০২২
১৯২১ সালের এই দিনে ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক নিজ জন্মস্থানে ফেরার চেষ্টা চালায়। এ সময় চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে চা শ্রমিকদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকে ২০ মে ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। মুল্লুক চলো আন্দোলনের ১০১ তম বর্ষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির ‘চা শ্রমিক ফেডারেশন ও লাল পতাকা মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (২২ মে) দুপুরে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণে প্রথমে লাল পতাকা মিছিল সমগ্র মৌলভীবাজার শহর প্রদক্ষিন করে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শহরের এম. সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজী পাশী এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ।
শ্রমিক নেতারা জানান, বারবার দাবি জানানো এবং অনেক আন্দোলনের পরও একশ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি দিবসটি। ঘুচেনি চা শ্রমিকদের বঞ্চনা। এই দিবসের স্বীকৃতি পেতে এবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনাস্থ জেলা পরিষদ কাম মাল্টিপারপাস হলরুমে মুল্লোক চলো আন্দোলনে শহীদ দানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা জানান, ‘চা-শ্রমিক দিবসটি শতবছরেও স্বীকৃতি না পাওয়ায় আমরা হতাশ। বারবার দাবি করেও শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে ভোটের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আমরা তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।’ এছাড়াও মজুরি বৃদ্ধি, ভূমির অধিকার, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আবাসন সুবিধাসহ অবহেলিত চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা সভা করা হবে বলে তিনি জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের নারী শ্রমিক আলোমনি মৃধা ও মিনা রায় বলেন, “হামরা চা শরমিকরা ১২০ টাকা মজুরি পাইয়া কিভাবে সংসার চালাবো? বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে তাতে এই টাকা দিয়া সংসার চলি না। এক একটা ঘরে বাচ্চা-কাচ্ছা লইয়া পাঁচ জন, সাত জন থাকি। তারার খরচ কেমনে চলবি?”
চা শ্রমিকরা জানান, করোনাকালীন ঝুঁকি নিয়েও চা বাগানে আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। এসব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ ১৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। তারা আরও বলেন, চা বাগানে আমাদের এই মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহে সপ্তাহে কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকা থাকে। এই টাকায় একবেলাই খাবার চালানো দায়।
কানিহাটি চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, অধিকারবঞ্চিত চা শ্রমিকদের রয়েছে করুণ ইতিহাস। দেশে প্রায় দু’শ বছর ধরে বসবাসরত চা শ্রমিকরা শ্রমে ঘামে প্রায় বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও তাদেরকে ছাড়ে না বঞ্চনা আর অভাব। সময়ের গতিধারায় দ্রব্যমূল্য পাল্লা দিয়ে বাড়লেও তাদের মজুরি সেভাবে বাড়ে না। প্রতিদিন ১২০ টাকা মজুরি নিয়ে জীবন কাটাতে হয় চা শ্রমিকদের।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরী চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩শ’ টাকা মজুরিসহ আমরা ২০ দফা দাবিনামা দিয়েছি। এই বিষয়টি নিয়েই মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে।