মাড়াই করেও ধান ঘরে তুলা হয়নি, গজিয়েছে চারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৮:৩৬,অপরাহ্ন ২৩ মে ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে মাড়াই দেওয়া ধান পাল দিয়ে ঢেকে রাখেন দুলাল মিয়া। ভাবছিলেন পরদিন বৃষ্টি শেষ হলেই রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলবেন সোনার ফসল। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি তার। বৃষ্টি যেনো কাল হয়ে আসে তার জন্য। লাগাতার বৃষ্টি বন্যার রুপ নেয়। ধান আর শুকানো হয়নি। প্রায় ১২ দিন পর রোদ উঠলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দুলাল মিয়ার। দেখেন সব ধানে এক ইঞ্চি লম্বা চারা গজিয়ে গেছে। কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার এই বাসিন্দা।
দুলাল মিয়া বলেন, বর্ষা আসলে মাছ মেরে তা বিক্রির টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে। নিজের ক্ষেতের ধান থাকায় চালের জন্য কখনও চিন্তা করতে হয়না। এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। ভেবেছিলাম নিজের খাওয়ার জন্য কিছু ধান রেখে বাকি ধান বিক্রি করে ঘরের কাজ করাবো। কিন্তু এবছর আমার সব আশা-ভরসার বিনাশ হয়ে গেলো। ধানে এতো লম্বা চারা অঙ্কুরিত হয়েছে যে এখন আর এই ধান থেকে চাল বের করা সম্ভব না। উপরওয়ালা আমায় এ কোন পরীক্ষায় ফেলে দিলেন!
এদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে একটু ভালো করে খুঁজ নিলে দেখা যায়, সড়কের দুপাশে অনেক জায়গাতেই পাল দিয়ে ঢাকা টিলার স্তুপ। কোথাও গরুর খাবারের জন্য খড় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কোথাও আবার সড়কে খড় শুকানো হচ্ছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের খানিকটা দূরে কয়েকজন মানুষের ভির দেখে এগিয়ে গেলে সেখানেও দেখা যায় একই অবস্থা। লিকসন দাস নামের এক যুবক জানান, আমরা মোটরসাইকেল থামিয়ে আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম অনেকগুলো হাঁস এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। হাঁসগুলো তাড়িয়ে দিতেই দেখি এখানে পালের নিচে ধানের স্তুপ। গরম ভাপ বেরুচ্ছে, আর দুর্গন্ধ। জানিনা কার ধান, কে মালিক! তবে এরকম দৃশ্য দেখবো কল্পনাও করিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম,’কে জানান, চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ২ লাখ ২১ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে এবং ১০৭৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত ছিল। যার কিছু অংশ পানি নামার পর কাটা হয়।
কাটা ও মাড়াই করা ধানের ক্ষতি নিয়ে কথা বললে তিনি জানান, আমি আজকেও সুনামগঞ্জের ছাতক, শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার বেশকিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। কৃষক বন্ধুদের সাথে কথা বলেছি, তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। আর ধানে চারা অঙ্কুরিত হলেও এগুলো রোদে শুকালে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যারা মনে করছেন ধানে গন্ধ ধরে গেছে বা সামান্য ক্ষতির মুখে আছে তারা ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে নিতে পারে।
জৈন্তা বার্তা