শিক্ষকতার চাকরি হারালেন মন্ত্রী কন্যা, বেতন ফেরতেরও নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৫:১৯,অপরাহ্ন ২০ মে ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
শিক্ষকতার চাকরি থেকে অঙ্কিতা অধিকারীকে বরখাস্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। স্কুলের শিক্ষক হিসেবে প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে এতদিন যে বেতন পেয়েছেন, তার পুরোটা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদফায় সেই অর্থ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হবে।
শুক্রবার (২০ মে) প্রতিমন্ত্রীর মেয়েকে শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। সকালে শুনানি শেষে অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকাকে শিক্ষকতার পদ থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা। কোচবিহারের যে ইন্দিরা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, সেই স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ, স্কুলে শিক্ষকতার জন্য ৪১ মাস যে বেতন পেয়েছেন অঙ্কিতা, তার পুরোটা দুটি কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে। প্রথম কিস্তির অর্থ জমা দিতে হবে আগামী ৭ জুনের মধ্যে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি নিজের মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা উচ্চবিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরেশের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, তফসিলি প্রার্থীদের প্রথম মেধাতালিকায় প্রথম ২০-তে ছিলেন না অঙ্কিতা। কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বর দ্বিতীয় তালিকায় একেবারে ‘টপার’ হয়ে যান মন্ত্রীর মেয়ে। প্রথম তালিকায় ২০ নম্বর স্থানে থাকা ববিতা সরকার মামলা করেন। দ্বিতীয় তালিকায় ২১ নম্বরে নেমে যান তিনি। ফলে চাকরি পাননি ববিতা সরকার।
১৭ মে মামলাটি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতি আরেক নির্দেশে এ ঘটনার জন্য রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পরেশচন্দ্র অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে সুপারিশ করেন।
মামলায় চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে কমিশনের তরফে জানানো হয়, ৬১ নম্বর পেয়েছিলেন ‘টপার’ অঙ্কিতা। সেখানে দ্বিতীয় মেধাতালিকায় ২১ নম্বরে থাকা ববিতা পেয়েছিলেন ৭৭। কমিশন কার্যত সরাসরি বলেই দেয় যে অঙ্কিতা পার্সোনালিটি টেস্টেও বসেননি। সেই পরিস্থিতিতে পরেশকে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কয়েক ঘণ্টা গোপনে থাকার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সিবিআইয়ের কাছে যান পরেশ। শুক্রবার সকালেও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ মুখে পড়েন মন্ত্রী। আর মন্ত্রী যখন সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখে পড়েন, তখন তার মেয়েকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট।
এ ঘটনায় অঙ্কিতা অধিকারীর ওপর ক্ষুব্ধ কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশ। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া সাজিনা খাতুন বলেন, আদালত যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভালো হয়েছে। তবে বড়লোকরা যদি এভাবে চাকরি নিয়ে থাকে তাহলে গরিব মানুষ কিভাবে বাঁচবে। বড়লোকরা যদি টাকা দিয়ে চাকরি করে তাহলে গরিব লোকরা কী দিয়ে চাকরি পাবে? তাই মেধার ভিত্তিতেই চাকরি পাওয়া দরকার। টাকা দিয়ে নয়।
হাইকোর্টের রায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, এ রায়ে খুশি গোটা বাংলার মানুষ। কারণ অশিক্ষিত মেয়ে পরীক্ষায় পাস না করে, তালিকায় নাম না থেকে হঠাৎ করে যদি কোথাও চাকরি পায় সেটা খারাপ। তার কারণ হলো যেই স্কুলেই তিনি চাকরি পান না কেন সেখানে তো আমার মেয়ে, বোন পড়াশোনা করে। আর কোনো স্কুলের শিক্ষিকার যদি যোগ্যতা না থাকে তাহলে বাকিরা তার থেকে কী শিখবে? তাই বলব এ ধরনের শিক্ষক-শিক্ষিকা যেখানে রয়েছেন সেখানে আমার মেয়ে-বোনকে পড়াতে চাই না।
শ্রেয়া দে নামে এক চাকরি প্রার্থী বলেন, আমরা চাই আগামীদিনে যেন চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত হয়। আর সবাই যেন তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পান।
এদিকে এ ঘটনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অমিতাভ দত্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, বিষয়টা আইনানুগ। এখন পর্যন্ত স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে আমার কাছে কোনো নির্দেশ আসেনি। ফলে এ মুহূর্তে কিছু বলা ঠিক নয়। কোনো নির্দেশ আসলে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গেও আমার কোনো আলোচনা হয়নি।