সিলেটে বন্যার ভয়াবহ রূপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৪:১০,অপরাহ্ন ১৭ মে ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে থাকায় সিলেট নগরীসড় আশপাশের বিভিন্ন উপজেলাতেও বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে । হঠাৎ করেই সুরমার পানি বাড়ায় বেশ আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করছেন। রাতেই অনেকের বাসায় পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। সিলেট নগরীর কয়েক হাজার মানুষ এখন পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন।অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন পানি বাসায় প্রবেশ করার কারণে। যাদের বাসায় পানি প্রবেশ করেনি তারাও রয়েছেন অনেকটা চিন্তার মধ্যে। বন্যার চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করেছেন তারা এখন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন অনেকেই।
আকস্মিক এই বন্যা নিয়ে অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।কেউ কেউ আবার পানিবন্দী অবস্থার চিত্র ও ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করছেন। সাংবাদিক ইলিয়াস আকরাম তার ফেসবুক ওয়ালে রাতে লিখেছেন, দরজার সামনে পানি প্রায় অর্ধ ইঞ্চি অবশিষ্ট বাসার ভেতরে প্রবেশের। এ অবস্থায় ঘুমোই কি করে। আল্লাহ সহায় হোন।
সকালে গিয়ে দেখা যায় শেষ রাতে তার বাসার নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি এখনো ক্রমাগত বাড়ছে। উপশহরের প্রায় রোডের ৯৫% বাসায় পানি উঠে গেছে।
সিলেট নগরীর উপশহর ডি ব্লকের বাসিন্দা ইমরান আহমদ জানান,সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমে আমি বেশ ক্লান্ত তারপরও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতে পারছিনা কারণ আমার বাসার সামনেই পানিতে টইটম্বুর করছে। কখন যে বাসায় পানি প্রবেশ করবে তা আমার জানা নেই।
এছাড়া অবিরাম বর্ষণে ও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরীর সোবহানিঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, লন্ডনি রোড, সাগরদিঘির পাড়, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, মোমিনখলা এলাকায়।
গত ৫-৬ দিনের অবিরাম বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার বেশীরভাগ এলাকা প্লাবনের কবলে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট।অনেক জায়গায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।হঠাৎ করেই সুরমার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর বেশ কিছু জায়গায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।সরেজমিনে মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে দেখা যায় কালীঘাট,যতরপুর উপশহর মেন্দিবাগ তেররতন ঘাসিটুলা কলাপাড়া লামাপাড়া মোল্লাপাড়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকটি বাসা এবং বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
নগরীর সুবাহানিঘাট এলাকার বাসিন্দা মাসুক আহমদ বলেন,সন্ধ্যার পর থেকেই আমাদের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পানি বাড়তে শুরু করেছে।এই পানি বাড়ার হার অনেক বেশি মনে হচ্ছে।আমার বাসায় এখনও পানি ডুকেনি তবে খুব চিন্তায় আছি।
এদিকে জৈন্তাপুর,কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব এলাকার অধিকাংশ লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব এলাকার উজানে বৃষ্টির পরিমাণ কমলে পানি কিছু কমে তবে বৃষ্টি বাড়লেই আবার বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। গত চার পাঁচ দিন থেকে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে সীমান্তবর্তী এসব উপজেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। বিশেষ ক্ষেতের ফসল ও পুকুরে চাষের মাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে।
এছাড়াও সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন হাওরের পানিও বাড়ছে সমানতালে পাল্লা দিয়ে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন,গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণেই মূলত সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়েছে।
এদিকে উজানী ঢলের কারণে হঠাৎ করে বেড়েছে সিলেটের নদীগুলোর পানি। তিনদিন আগেও যেখানে পানি নদীর পার থেকে কয়েকফুট নিচে ছিলো সেখানে গত ২৪ ঘন্টায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে,সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান,সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এটি দুশ্চিন্তার কারণ।তিনি আরও জানান,ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে,আর সেই পানি উজান বেয়ে বাংলাদেশে আসছে।যদি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি না কমে এই পানি কমার কোন সম্ভাবনা নেই। টানা বর্ষণ আর ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১.৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।