সিলেট পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির সমার্থক শব্দ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩২:১৭,অপরাহ্ন ১৫ মে ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সরকারি কর্মদিবসেও বন্ধ অফিসের প্রধান ফটক। দালাল ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। পুলিশ ভেরিফিকেশন, জন্মনিবন্ধন সনদ আর সত্যায়িত করার সিল সবই আছে দালালের কাছে। দরকার শুধু টাকা। নিজে না গিয়েও পকেটভর্তি টাকা দিলেই হলো, আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত। কিন্তু নিয়মানুসারে আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাওয়া যায় না পাসপোর্ট।
সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের প্রতিদিনকার চিত্র এটি। শুক্রবার ছুটির দিনেও কাজ চলছে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কর্মদিবসগুলোর মতোই অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। দারোয়ান-দালাল-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনিয়মও চলছিল অন্যদিনগুলোর মতোই।
নগরীর উপশহর এলাকার ই-ব্লকের একটি বাড়া বাসায় চলা সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসটির সামনে প্রায় সব সময়ই শ’খানেক মানুষের জটলা লেগে থাকে। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে পাসর্পোট অফিসে দালালদের ব্যবসাও তাই রমরমা! আবাসিক এলাকায় অফিস হওয়ায় আশেপাশের বাসিন্দারাও এতোদিনে জেনে গেছেন এখানকার কাজ আর দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে এলে পাসপোর্ট করা যায় না। দালালের হাতে টাকা তুলে দিলেই পাসপোর্ট পৌঁছে যায় ঘরে।
দালাল কারা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, বাইরের কেউ নয় এখানকার দারোয়ান থেকে বড় কর্মকর্তা সবাই দালাল। দালাল বাদ দিলে অফিসে কোনো লোক নেই।
তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ অফিসের প্রধান দুই কর্মকর্তা। একজনের মতে, অভিযোগ সঠিক নয়। আর অন্যজন বলেন, পাবলিক অফিসে ভোগান্তি তো হবেই।
নগরীর মজুমদারী এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ জামান এসেছেন পাসপোর্ট নিতে। তাকে গেটে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সালমান নামের এক চৌকিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তিনি। তারপর তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেখানে ১০ হাজার টাকা দিয়ে হাতে পেলেন পাসপোর্ট।
গোলাপগঞ্জ থেকে পাসপোর্ট করতে আসা কলেজছাত্র আমিরুল ইসলাম বলেন, পাসপোর্ট অফিসে টাকা দিতেই হয়, না দিলে হয়রানির শেষ নেই। হয়রানি বন্ধ করতে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তার। কারণ, অফিসে গেলেই টাকা লাগে।
নগরীর তালতলা এলাকার সৈয়দ জাবির আহমদ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন স্বাভাবিক নিয়মে। দুই মাসে পাসপোর্টের খোঁজে অফিসে ঘুরেছেন তিনবার। পাসর্পোট তো দূরের কথা, তিন মাসে তার পুলিশ ভেরিফিকেশনই হয়নি। জাবিরের সঙ্গে পাসর্পোট করতে অফিসে এসেছিলেন আরও তিনজন। বাকিরা এক দারোয়ানের মাধ্যমে সাত হাজার টাকা দিয়েছিলেন এ জন্য। এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পান এ তিনজন।
পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন ধরনের মামলায় পলাতক আসামিসহ অনেকেই। আর নগদ টাকার বিনিময়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই নগদে পেয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট।
চৌকিদারদের দেওয়া টাকার এক বড় অংশই যায় অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে। আবার সিলেটের অনেক ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগে নামে-বেনামে পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে।
সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক কফিল উদ্দীন ভুঁঞা বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। পুলিশ ভেরিফেকেশন ছাড়া কারও পাসপোর্ট হচ্ছে না।
১৫ দিন ধরে ঢাকায় পাসপোর্টের মেশিন নষ্ট থাকায় অনেকেই পাসপোর্ট পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে পাসপোর্ট আসছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও তাই কাজ চলছে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে।
তবে পাসর্পোট অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) কাজল খন্দকার বলেন, যেহেতু এটা পাবলিক অফিস, সেখানে এরকম ভোগন্তি হবেই।
সূত্র বাংলানিউজ