কচুর লতি বেচে ‘ভাইরাল’ অধ্যাপক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২২, ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গায়ে টি-শার্ট, পরনে ট্রাউজার প্যান্ট। চোখে রয়েছে চশমাও। দেখতে বেশ মার্জিত মনে হলেও প্লাস্টিকের টুলে বসে বিক্রি করছেন লতি। সাধারণ বিক্রেতা কিংবা চাষিদের চেয়ে আলাদা হওয়ায় সবার নজর তার দিকে। এ কচুর লতি বিক্রি করা আর কেউ নন, তিনি সবারই পরিচিত অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স।
বাজারে বসে অধ্যাপকের কচুর লতি বিক্রি করা দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকেও ছেড়েছেন। এর মধ্যেই একটি ছবি ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারের। লতি বিক্রি করা সেই শিক্ষক বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও কৃষিকে ভালোবেসে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ৮ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন তিনি।
ঘটনার পর থেকেই কচুর লতি বিক্রি করা অবস্থায় অধ্যাপকের ছবিটি নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অধ্যাপক হয়েও তার কৃষিকাজ ও সাধারণ জীবনকে বাহবা দিচ্ছেন সবাই।
ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনসাম্বল থিয়েটারের সভাপতি আবুল মনসুর ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘কেউ হয়তো ভাবতেই পারেন, ছবির মানুষটি এমনিতেই বসে আছে। কিন্তু না, উনি নিজের উৎপাদিত কৃষিপণ্য গ্রামীণ হাটবাজারে বসে বিক্রি করছেন। ছবিতে দেখতে পাওয়া লোকটির নাম ড. আবু বকর সিদ্দিক। ডাকনাম প্রিন্স। লোকটি একজন আপাদমস্তক কৃষক। শহুরে আয়েশি জীবন ত্যাগ করে গ্রামেই নিয়মিত থাকতে অভ্যস্ত হয়েছেন। দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।’
আবুল মনসুরের এ পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ওই পোস্টে নাঈমা আফরিন তৃষা নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। তারই উদাহরণ তিনি। শ্রদ্ধামাখা ভালোবাসা ও শুভ কামনা রইল।’
ছবিটি শেয়ার করে পোস্ট দিয়েছেন ত্রিশালের কাঁঠাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক মো. আনিছুর রহমানও। তার পোস্টটিও ভাইরাল হয়।
অধ্যাপক প্রিন্স বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতেন। ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরে ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডিও করেন তিনি।
নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে ছয় মাস ছুটি নিয়ে খামারে কৃষিকাজ করেন প্রিন্স। স্থানীয় প্রায় সবধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি নিয়ে গিয়েছিলাম। পাইকার বলেছিলেন ৪০ টাকা। কিন্তু বাজারে বসে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে তিনজনের কাছে টাকা কম থাকায় দাম কম নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই মানুষ। কে কোন পর্যায়ে আছি সেটা বড় বিষয় না। এছাড়া নিজের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।