মৃত মাকে জীবিত দেখিয়ে ভাতা তোলেন নারী কাউন্সিলর!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০১:০৯,অপরাহ্ন ১১ মে ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নওগাঁর পত্নীতলায় নজিপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মোছা. ফারজানা খাতুনের বিরুদ্ধে মৃত মাকে জীবিত দেখিয়ে গত ৯ মাস ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, জীবিত থাকার সময় ওই নারী কাউন্সিলরের মা প্রতিবন্ধী না হলেও তাকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়া পরিবারের সব সদস্য, আত্বীয়-স্বজনকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোনো না কোনো সেবায় অন্তর্ভুক্ত, পৌরসভার বাইরের মানুষকে পৌর সেবায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিল্ডিং প্ল্যান পাস করিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পৌর নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো নজিপুর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মোছা. ফারজানা খাতুন।
নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তিনি নানারকম অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজের সুস্থ মা মোছা. ফাতেমা বেগমকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন (ওয়ার্ড নং-৭, সিরিয়াল নং-৩৬) এবং বাবা নেজাম উদ্দিনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন (ওয়ার্ড নং-৭, সিরিয়াল নম্বর ৩২)।
গত ৯ মাস আগে কাউন্সিলরের মা মারা গেলেও তিনি মৃত মায়ের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, বাবা-বোনসহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোনো না কোনো সেবায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এমনকিসামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সেবায় অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়ার নামে উপকারভোগিদের কাছ অর্থগ্রহণ, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিল্ডিং প্ল্যান পাস করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা, পৌরসভার বাইরের মানুষকে পৌরসভার সেবায় অন্তর্ভুক্ত করা, অকৃষদের মাঝে ভুর্তকির সার ও বীজ বিতরণের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর ফারজানা খাতুনের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হরিরামপুর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মানিক নামে এক ব্যক্তিকে কাউন্সিলর ফারজানা কৃষি ভুর্তকির কার্ড করে দেন। কিন্তু তার কোনো জায়গাজমি নেই। মানিক কাউন্সিলর ফারজানার বোন জামাই।
নজিপুর নতুনহাট মোড় এলাকার বাসিন্দা হাসান হাবিব সরকার বলেন, তার স্ত্রী নাসরিনের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য কাউন্সিলর ফারজানার কাছে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তার স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারজানার সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নজিপুর পৌরসভার মেয়র রেজাউল কবির চৌধুরী জানান, মৃত মায়ের নামে কাউন্সিলর ফারজানার ভাতা তোলার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এছাড়া পৌর এলাকার বাইরে মানুষদের বিভিন্ন সেবায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগসহ সব অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. সুলতান আহমেদ বলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারজানা খাতুনের মা প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ছিলেন এটা সত্য। কয়েক মাস আগে তার মারা গেছে শুনেছি। আমরা বিষয়টি জানার পর পৌর মেয়রকে নতুন নাম প্রতিস্থাপন করতে বলেছি। নাম প্রতিস্থাপন না করায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভাতার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। তার বাবা নেজাম উদ্দীনের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড রয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।