ঈদ শেষ, এবার সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে তো?
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৫:৫৬,অপরাহ্ন ০৪ মে ২০২২
সুরমা নিউজ:
ঈদ তো শেষ, এবার কি বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে? এমন প্রশ্ন সবার। বিক্রেতাদের বক্তব্য—বিষয়টি নির্ভর করছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সরবরাহের ওপর। তারা যদি এই নিত্যপণ্যটির সরবরাহ ঠিক রাখেন, তাহলে বাজারে কোনও সংকট হবে না। অপরদিকে মিল মালিকরা জানিয়েছেন, কখনোই মিলগেট থেকে সরবরাহে সংকট হয়নি। বরং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা বেশি মুনাফার আশায় মিলগেট থেকে সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ নিয়ে মজুত গড়েছে। এ কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ঈদ চলে যাওয়ায় কিছুটা চাহিদা কমেছে। ফলে কিছু দিনের জন্য ভোজ্যতেল নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি হবে না, এমন প্রত্যাশা নীতিনির্ধারকদের।
জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাজারগুলোতে গত কয়েক দিন সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। ঈদের আগের দিন বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটে চরম বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এক ভিডিও বার্তায় ব্যবসায়ীদের মজুতে থাকা সব সয়াবিন তেল ঈদের আগে বিক্রির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার এই আহ্বানেও মন গলেনি ব্যবসায়ীদের। অনৈতিক বেশি মুনাফার আশায় মজুত করা সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়েননি ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
বুধবার (৪ মে) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পরের দিন হওয়ায় বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে যেগুলো খুলেছে, ক্রেতা সংকটের কারণে অনেকটাই অলস সময় পার করছেন দোকানিরা। তারা জানান, ঈদের পরের দিন হওয়ায় ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা ও চাহিদা দুটোই কমেছে। এর ফলে আপাতত ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, ঈদের আগে প্রায় সপ্তাহখানেক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে সয়াবিন তেলের সারি সারি বোতল। তখন বিক্রেতারা জানিয়েছিলেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ দেয়নি বলে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেছে। আবার কোনও কোনও ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করলেও শর্ত জুড়ে দেয়। যেমন, সয়াবিন তেল কিনলে তাদের কাছ থেকে পোলাও চাল, চা পাতা, সরিষার তেল নিতে হবে। না হলে সয়াবিন তেল বিক্রি করবে না।
তবে দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দাবি, সয়াবিন তেলের সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই। খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুত করায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আশা করছি বাজারে ভোজ্যতেলের আর কোনও সংকট হবে না। ঈদের আগের পরিস্থিতির উদ্ভব আবারও হোক, তা চাই না। ভোজ্যতেল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রুখতে আমাদের মোবাইল কোর্টের অভিযান চলবে।’
তিনি জানান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় অবৈধ মজুত গড়েছিলেন বলেই বাজারে কৃত্রিম সংকট হয়েছিল। মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগ সঠিক নয়। মিলগেটে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর মাতুয়াইল মুসলিম নগরের খুচরা বিক্রেতা বিপ্লব জানিয়েছেন, ঈদের আগে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ ছিল না। সয়াবিন তেলের সঙ্গে কোম্পানিগুলো চা পাতা ধরিয়ে দেয়। তবু সয়াবিন তেল পাচ্ছিলাম না। ঈদের পরে এখন আর সেই সংকট নেই। পর্যাপ্ত ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিত না হলেও ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে। আর ক্রেতাও কম। তবে রাজধানীতে মানুষের আগমন ঘটলে চাহিদা বাড়বে। তখন যাতে সরবরাহ ঠিক থাকে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখারও পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমরা যদি তেল আনতে না পারি, তাহলে কীভাবে বাজারে দেবো? বিশ্ব বাজারে তেল নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা তো মজুতও করতে পারছি না। গুদামে ১০ ড্রাম তেল পেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তেল যারা আমদানি করেন, উৎপাদন করেন, তারা যদি না দেন, আমরা কীভাবে পাবো।’
বাংলাদেশে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘ঈদের পরে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে পারে, এমন আশায় খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুত করে রাখছেন। তাদের দোকানে তেল নেই, অথচ গোডাউনে মজুত করে রাখা আছে। ঈদের পরে ভোজ্যতেল সংকটের কোনও কারণ নেই। আমরা নিয়মিত তেল সরবরাহ করছি।’ তিনি বলেন, ‘সিটি গ্রুপের পণ্য বিক্রি করতে শর্ত লাগে না।’