লাঠি হাতে কেন মেয়র?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩৬ অপরাহ্ণ
হাত পেতে আছেন একজন ভ্যানচালক, লাঠি হাতে উদ্যত সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবি নিয়ে সমালোচনায় মুখর নেটিজেনরা। ওই ভ্যানচালক জানিয়েছেন তার হাতে বাড়ি দিয়েছেন সিটি মেয়র, তবে বেতের বাড়ি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মেয়র আরিফ। এদিকে আইনজ্ঞরা বলছেন, কাউকে বেত্রাঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
নগরে লাঠি হাতে কেন সিটি মেয়র—এমনও প্রশ্ন অনেকের। তবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, তার হাতে লাঠি সবসময় থাকে। লাঠি হাতে রাখাকে সুন্নত বলছেন তিনি।
শনিবার বেলা দেড়টায় নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় আল-হামরা শপিং সিটির ঠিক পাশেই। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের ভাষ্য অনুযায়ী, বেলা দেড়টার দিকে মেয়র জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখেন, একজন ভ্যানচালক তার গাড়ি দাঁড় করিয়ে মালামাল ওঠাচ্ছেন। এ সময় তিনি ওই চালককে ডেকে এনে তার হাতে দুটো বেতের বাড়ি দেন। তবে মেয়রের দাবি, তিনি বাড়ি দেননি। সড়কে ভ্যান রেখে মালামাল ওঠানো–নামানো করায় বেত উঁচিয়ে শাসিয়েছেন মাত্র।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের আগে নগরে যানজট যেন না হয়, সে জন্য কয়েক দিন আগেও পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সিটি করপোরেশন সভা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকাল ১০টার আগে ভ্যান–জাতীয় যানগুলোকে মালামাল ওঠানো–নামানোর কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু আজ বেলা দেড়টার দিকে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দেখেন, ওই চালক দুটি ভ্যানগাড়ি দিয়ে মালামাল ওঠানো–নামানো করছেন। এতে সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।
বেতের বাড়ি দেওয়ার তথ্য সত্য নয় দাবি করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি ওই চালককে বেতের বাড়ি দিইনি। বেত উঁচিয়ে একটু শাসিয়েছি মাত্র। ভবিষ্যতে যেন এভাবে যান দাঁড় করিয়ে তিনি যানজট সৃষ্টি না করেন, পরে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলেছি। অথচ বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ছবিটি ছড়িয়ে অযথাই আমাকে বিতর্কিত করছেন।’
মেয়র কেন লাঠি হাতে—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাঠি সবসময় হাতে থাকে। লাঠি হাতে থাকা সুন্নত। তিনি বলেন, আমি ধমক দিয়েছি সত্য, কিন্তু বেত্রাঘাত করিনি।
সামনে থাকা গাড়ি সম্পর্কে কিছু বলেননি এই প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, সামনে ছিল স্পেশাল পিপির গাড়ি। আমি ধমক দেওয়ার পর তিনি গাড়ি ছেড়ে চলে যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই ছবি সম্পর্কে মেয়র আরিফ বলেন, এটা একধরনের সস্তা অপপ্রচার। এটা কেবল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা।
এদিকে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সপ্তর্ষি দাস জানান—একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছে পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেয়রের গাড়ি, তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি দেন। কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিলো কিন্তু কবি সেখানে নীরব।
এই শহরের অনেক রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের পিট খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে, অভিযোগ সপ্তর্ষি দাসের।
রুবেল আহমদ নামের ওই ভ্যানচালকের সাথে কথা বলেছে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর। তিনি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যান চালান। শনিবার দুপুরে ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সড়কে ভ্যান রেখে আমি পাশের দোকানে সিগারেট নিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়রকে দেখে দৌড়ে ভ্যান সরাতে আসি। কিন্তু তার আগেই মেয়র লাঠি দিয়ে আমার হাতে বাড়ি দেন।
ওই ভ্যান গাড়ির সাথে ছিলেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রয় প্রতিনিধি ধ্রুব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমি পাশেই ছিলাম। মেয়র চালককে মারছেন দেখে দৌড়ে আসি। তিনি বলেন, মেয়র এই কাজটি ঠিক করেননি।
এদিকে, বেত দিয়ে আঘাতের আইনগত ভিত্তি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ১৯০৯ সালের একটি আইনে বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে, তবে এই আইনে কাউকে বেত্রাঘাত করতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়।দেশে এই আইনের প্রয়োগ নেই। এর বাইরে পুলিশ আইনে প্রয়োজনে লাঠিপেটার বিধান রয়েছে। এছাড়া কাউকে বেত্রাঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, মেয়র প্রকাশ্যে রাস্তার হকার, রিকশা-ভ্যানচালকদের মারধর করেন, এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। একজন মেয়র বেত হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, ইচ্ছে হলে বেত্রাঘাত করেন—এটি ভয়ঙ্কর ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অপরাধ।