ই’তিকাফ ও সদকাতুল ফিতরের বিধি বিধান
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫১:০২,অপরাহ্ন ২০ এপ্রিল ২০২২
মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে সম্মানি ও গুরুত্বপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান। এ মাসে মুসলমানরা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করে তাঁর নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ পাক এ মাসের মধ্যে তাঁর হাবিব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উচিলায় এমন একটি রাত দান করেছেন যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কুরআন শরীফে এ রাত কে লাইলাতুল কদর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর মকবুল বান্দাগণ এ রাত কে তালাশ করার জন্য রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে মশগুল থাকেন।
ইতিকাফের অর্থঃ
ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতা, অবস্থান করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় দুনিয়ার যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদ বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করা বা স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।
রাসুল (সাঃ) নিজে ইতিকাফ করেছেন এবং সাহাবাদেরকেও ইতিকাফ পালনে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মসজিদ মুত্তাকিদের ঘর। যে ব্যক্তি ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করবে আল্লাহ তার প্রতি শান্তি ও রহমত নাজিল করবেন এবং পুলসিরাত পার-পূর্বক বেহেশতে পৌঁছবার জিম্মাদার হবেন।’
ইতিকাফের ফজিলতঃ
রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-ই-কিফায়া। মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তি ইতিকাফ আদায় করলে সবার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। কেউ যদি ইতিকাফ না করেন তবে সবাই সুন্নাত ত্যাগের জন্য সবাই দায়ী থাকবেন।
পবিত্র কুরআনে বিভিন্নভাবে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ
এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো। [সূরা বাকারা]
এর ফলে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়, এবং আল্লাহ তাআলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٦
আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা আয-যারিয়াত)
ইতিকাফে থাকা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বর্ননা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন
وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ
আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না। (সূরা বাকারা)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে ব্যক্তি গোনাহসমূহ হতে বিরত থাকে এবং তার জন্যে নেকিসমূহ লেখা হয় ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে বাইরে থেকে যাবতীয় নেক কাজ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. হতে বর্নিত,
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْر الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও এটি আদায় করতেন। (সহীহ মুসলিম। সহীহ বুখারী)
হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্নিত
كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.
জিবরাইল (আ) প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনান। রাসুল (সা) প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। (সহীহ বুখারী)।
ইতিকাফকারীর জন্য দুটি হজ্জ ও দুটি ওমরার সওয়াব রয়ে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুটি হজ ও দুটি ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকী)
ইতিকাফের ফজিলতঃ
ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য ওয়াক্ত নামাজের অপেক্ষায় থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে, তার পরিবারের কাছে যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।’ (মুসলিম)
ইতিকাফের প্রকারঃ
সুন্নত ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।
ওয়াজিব ইতিকাফঃ মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
নফল ইতিকাফঃ সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর নির্ধারিত কোন মেয়াদ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। সাওম পালন করা শর্ত নয়। তবে নফল ইতিকাফের দোহাই দিয়ে মসজিদের ভিতরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা জায়েজ নয়। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক ইমানদারের কর্তব্য।
মুতাকিফের জন্য করনীয়ঃ
যিনি ইতিকাফ করেন তাকে মুতাকিফ বলা হয়। একজন ইতিকাফ কারীর জন্য ইতিকাফ অবস্থায় যা করনীয়।
১. যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, সে মসজিদে ইতিকাফ করা।
২. ২০ রমজান সুর্যাস্ত হওয়ার পুর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে।
৩. ইতিকাফের নিয়্যত করতে হবে।
৪. কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
৫.পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সুন্নত গুলো যথাযথ আদায় করা।
৬. নফল নামাযসমুহ সালাতুত তাসবীহ,ইশরাক,দ্বোহা বা চাশত,আওয়াবীন ইত্যাদি নামায আদায় করা।
৭. বেশি বেশি দুরুদ শরীফ ও ইস্তেগফার পাঠ করা।
৮. উমরী কাযা নামায আদায় করা।
৯. প্রতি উযু করার পর তাহিয়্যাতুল উযু নামায আদায় করা।
১০. ইতিকাফ অবস্থায় ঘুম খাওয়া দাওয়া মসজিদের ভিতরে করতে হবে।
এক কথায় ইতিকাফ কালীন সময়টুকু আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির মধ্যে কাটানো।
টাকার বিনিময়ে ইতিকাফঃ
টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা এবং করানো উভয়ই নাযায়েজ। আমাদের সমাজে একটি ভুল রুসুম জারি রয়েছে যে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন ইতিকাফ করবেন এবং বিনিময়ে গ্রামবাসী তাঁকে হাদিয়া প্রদান করবে। এটা সম্পুর্ন না জায়েজ। গ্রামের যে কোন একজন ইতিকাফ করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। তবে যদি কোন গ্রামের মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন সেচ্ছায় ইতিকাফ করেন দুনিয়াবি স্বার্থ ছাড়া তারপর গ্রামবাসী যদি উক্ত ইমাম বা মুয়াজ্জিন কে ইতিকাফের বিনিময়ের নিয়্যত ছাড়া গ্রামের সবাই কে দায়মুক্ত করার জন্য খুশি হয়ে তাকে হাদিয়া প্রদান করলে সেটা সম্পুর্ন জায়েজ।
মহিলাদের ইতিকাফঃ
পুরুষদের মতো মহিলারাও রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতে পারবেন। তবে মহিলারা মসজিদে নয় নিজ ঘরের কোন এক কোনায় জায়গা নির্দিষ্ট করে ইতিকাফ করতে পারবেন। মহিলার ইতিকাফ অবস্থায় হায়েজ নেফাছ শুরু হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জনীয়ঃ
১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা, ২. ঝগড়া-ঝাটি বা অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৩. গীবত বা পরনিন্দা করা, ৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচা-কেনা করা।
যেসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যায় : ১. ওজরবশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. বিনা ওজরে মসজিদের বাহিরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।
ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধঃ
১. মসজিদে পানাহার করা ২. শৌচকর্ম বা পেশাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া ৩. ফরয গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া ৪. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করতে পারে ৫. আজান দেওয়ার জন্য বাহিরে যাওয়া।
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি ও এ রাতের ঘোষিত ফজিলত লাভে ইতেকাফের চেয়ে উত্তম কোনো উপায় নেই। তাই এই সুযোগকে যথাযথ মূল্যায়ন করে যথাযথ কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া যাবে। (রদ্দুল মুহতার,আহসানুল ফাতাওয়া )
রাসুল (সা.) ইতিকাফ থাকাকালে আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ মনোনিবেশ করতেন। তিনি সারাক্ষণ মসজিদে অবস্থান করতেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন তিনি ইতিকাফে থাকতেন তখন প্রয়োজন ছাড়া বাসায় আসতেন না। ’ (সহিহ বুখারি)
সদকাতুল ফিতরঃ
সদকাতুল ফিতর একটি অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা রমজান শেষে ঈদুল ফিতরের পূর্বে আদায় করা হয়। কেননা রোজা রাখতে গিয়ে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়। সদকায়ে ফিতরের মাধ্যমে রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণ হয়। যেমনি নামাজের ত্রুটি-বিচুত্যি পূরণ হয় সাহু সিজদার মাধ্যমে। এ ছাড়া ধনী-গরিব উভয়ে যেন অন্তত ঈদের দিন উত্তম পোশাক ও ভালো খাবার খেতে পারে এজন্যই এ ফিতরার ব্যবস্থা। ফিতরা দ্বারা সমাজের অসহায় শ্রেণির সহায়তা করে ইসলাম অনন্য নজির স্থাপন করেছে। হাদিসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রোজাকে অনর্থক কথা ও অশালীন কাজ হতে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের মুখে খাদ্য দেওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ) হযরত জারির রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা সদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
ফিতরার নিসাব:
ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় যার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে, তার উপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। যে শিশু-সন্তানটি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হবে, তার ফিতরাও আদায় করতে হবে। অর্থাৎ পরিবারের যতজন সদস্য ফিতরাও ততটি আদায় করতে হবে। যাকাতের জন্য নিসাব পুর্ণ এক বছর স্থায়ী হওয়া শর্ত কিন্তু ফিতরার জন্য এক বছর শর্ত নয় ঐ দিন নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকলে ফিতরা ওয়াজিব।
সদকাতুল ফিতর কাদের উপর ওয়াজিবঃ
ঈদের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার কাছে যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থাৎ অত্যাবশ্যকীয় আসবাব সামগ্রী ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, বাসগৃহ ইত্যাদি বাদ দিয়ে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমান সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় এ পরিমাণ মালের মালিক থাকলে, তার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। যে শিশু-সন্তানটি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে ভূমিষ্ট হবে, তার ফিতরাও আদায় করতে হবে।
অর্থাৎ পরিবারের যতজন সদস্য ততটি ফিতরা হিসেবে) সকলের ফিতরা আদায় করতে হবে।
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবেন।
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণঃ
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বোখারি )।
ইবনে আব্বাস (রা.) একবার রমজানের শেষ দিকে বসরায় খুতবা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, তোমাদের রোজার সদকা আদায় করো। লোকেরা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি।
তখন ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, এখানে মদিনার কে আছে দাঁড়াও। তোমাদের ভাইদেরকে বলো, তারা তো জানে না। বলো যে, রাসূল (সা.) এই সদকা আবশ্যক করেছেন। এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম প্রত্যেক স্বাধীন-দাস, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজিব। (আবু দাউদ)।
ফিতরা কাকে দিবেনঃ
যারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত এমন অভাবী লোকদের সদকাতুল ফিতর প্রদান করতে হবে। জাকাতের জন্য সম্পদের বর্ষপূর্তি শর্ত হলেও ফিতরায় এ শর্ত নেই। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নিজের পক্ষ থেকে, নিজের প্রাপ্ত এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে এবং নিজের সেবক-সেবিকাদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। সন্তান বা অধীনস্থরা অমুসলিম হলেও তাদের ফিতরা আদায় করা আবশ্যক।
গম বা আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির- এ পাঁচটি জিনিস বা তার মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। সামর্থ্যানুসারে সবার উচিত উৎকৃষ্ট জিনিস সাদকা করা। রাসূল (সা.)-এর সময়ে সামর্থ্যানুযায়ী সবাই উত্তম পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন।
ফিতরা আদায়ে কার্পণ্যঃ
রোজার ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে হেফাজতের জন্য ফিতরা আদায় করতে হয়। তাই আমাদের উচিত সর্বোত্তম বস্তু দিয়ে ফিতরা আদায় করা। সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, দাতার কাছে যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। (বোখারি )।
ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা অদ্ভুত মানসিকতার পরিচয় দেই। আমাদের দেশে সাধারণত সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্ধ সা‘ গম এর মূল্য হিসেবে জনপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা হিসেবে সবাই আদায় করতে চান। কোটিপতি হতে মধ্যবর্তী সবাই সর্বনিম্ন ৭০-৭৫ টাকা দিয়েই দায়মুক্ত হতে চান। সবচেয়ে কম মূল্যের গমের হিসাবে সবাই সাদকা করার প্রবণতা খুব বেশি। বিষয়টি রাসূল (সা.)-এর শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বরং এটা তো সর্বনিম্ন সম্পদের মালিকের জন্য চলে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে তাওফিক দিয়েছেন, তাদের অন্যান্য দ্রব্য দিয়ে সর্বোচ্চ সদকায়ে ফিতর আদায় করা উচিত। আমাদের দেশে প্রচলিত হয়ে গেছে কোটিপতিরাও ৭০-৭৫ টাকা হিসাব করে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায়। তাই সামর্থ্যানুযায়ী বেশি মূল্যের পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার নৈকট্য লাভের জন্য ইতিকাফ ও যথাযথ সদকায়ে ফিতর আদায়ের তাওফিক দান করুন।