লাখাইয়ে ডুবুডুবু অবস্থায় ধানের শীষ, কৃষকের মাথায় হাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১০:২১ অপরাহ্ণ
চোখের সামনে সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হাওড়পারের কৃষকদের কান্না থামছে না।
লাখাইয়ে হাওর অঞ্চলে বোর মৌসুমে ২৮ বা আগাম ধান পাকা ধান কাটা শুরু হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই পাকা ধান গোলায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে হাওর অঞ্চলের কৃষক কৃষাণীরা ।
এক মাত্র ফসলকে ঘিরে কৃষকের পরিবারের অভাব দূর হবে সে স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও হঠাৎ করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে কেড়ে নেয় তাদের মুখের হাসি।
উপজেলা প্রশাসনের তাগিদ ও পানি বৃদ্ধির কারণে কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটেছে হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল হিসাবে পরিচিত লাখাই উপজেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়া ভাটি এলাকার কৃষকের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ। মহাজনদের টাকা পরিশোধ ঘরের খাবার চিন্তা করছে ভাটি এলাকার কৃষকরা ।
সরেজমিন দেখা যায়, পানিতে থাকা আধা পাকা ধান কাটছে কৃষকরা। তাদের চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। যে ধান কাটা হচ্ছে তার বেশিরভাগই কাজে লাগবে না। তবু উপায় না থাকাই এসব ধান কাঁচা কাটতে হচ্ছে তাদের। নদীর দুই পাশে ধানের জমিগুলোর কোনটি কাটা হয়েছে আার কোনো কোনো জমি আদা পাকা পাকা ধান কাটছে ২৯ জাতের ধান তলিয়ে গেছে আবার কোনটির শীষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পানি।
উপজেলার শিবপুর গ্রামের এনামুল হক চৌধুরী সহ কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এক কানি প্রতি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা।
স্বজনগ্রামের কৃষক আনজব আলী বলেন, অনেক ধার দেনা করে ২০ কানি জমিতে আটাশ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচশ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে ফেলায় এখন এক থেকে দেড়শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।
অপর কৃষক কালা মিয়া বলেন, কানি প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি কামিতে দিতে হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
কৃষক রতম বৈষ্ণব বলেন, প্রতিবছর চলতি সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েকশত কানি ধানি জমির ফসল হুমকির মুখে।
বুল্লা ইউনিয়ন মাদনা গ্রামের কৃষক অমূল্য রায় বলেন ২৮ ধান নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পানিতে আমাদের এলাকায় তেমন ক্ষতি হবেনা।
লাখাই উপজেলা কৃষি অফিসার শাকিল খন্দকার বলেন, সরকার যদি বলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে আমরা চেষ্টা করছি । রবিবার হাওরে গিয়ে দেখে, বোগার খাল ও আগারদোনার খাল এর ব্যবস্হা নেব।
অন্যদিকে কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ভারতের বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লাখাইয়ে বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি বেড়েছে। উপজেলার লাখাই ইউনিয়নের শিবপুর স্বজনগ্রাম, কামালপুর, সন্তুষপুর, বুল্লা ইউনিয়নের সামান্য কিছু জমি, বামৈ ইউনিয়নের নয়াগাঁও , সহ প্রায় ৩০০/৪০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে পানিতে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাওর অঞ্চল বেষ্টিত লাখাই ইউনিয়ন।