সব চেষ্টা ব্যর্থ, বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সুনামগঞ্জের গুরমার হাওড়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ৭:২৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের পাহাড়ি নদ-নদীতে অস্বাভাকিভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওড়সংলগ্ন ২৭নং পিআইসির অধীন গলগলিয়া বাঁধ ভেঙে হাওড়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে বাঁধটির ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
রোববার বিকাল ৪টার দিকে এ বাঁধ ভেঙে যায়। এর আগে সকাল ৮টায় ওয়াচ টাওয়ার-সংলগ্ন বাঁধের ওপর দিয়ে গুরমার হাওড়ে পানি প্রবেশ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওড়ের এই অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও প্রশাসন কাজ করছিল কয়েক দিন ধরে। তবে টাওয়ার-সংলগ্ন হাওড় সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় উপচে পানি ঢোকা অংশে বাঁধ নির্মাণে বিধিনিষেধ ছিল। তাই এই অংশে বাঁধ নির্মাণ করেনি প্রশাসন। তাই পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার সকাল থেকে ওয়াচ টাওয়ার-সংলগ্ন বাঁধ দিয়ে বর্ধিত গুরমার হাওড়ে পানি ঢোকা শুরু হয়।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, বর্ধিত গুরমার হাওড়ে তাহিরপুর উপজেলা অংশে প্রায় ৬০ হেক্টর জমি রয়েছে। বাঁধ উপচে হাওড়ে পানি ঢোকার ফলে হাওড়ের জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।
তবে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, গুরমার হাওড় তলিয়ে গেলে তাহিরপুর ও পার্শ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার ছোট বড় বেশ কয়েকটি হাওড়ের ফসল তলিয়ে যাবে। এতে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল বিনষ্ট হবে।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, রোববার ভোর ৪টায় স্পিডবোটযোগে তিনি, ইউএনও মো. রায়হান কবীর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বর্ধিত গুরমার ২৭নং প্রকল্পটি দেবে গেছে শুনে পরিদর্শনে এসেছিলেন। ভোর থেকে ওই বাঁধে কাজও করছিলেন। সকাল ৮টার দিকে খবর আসে ওয়াচ টাওয়ারের পূর্বদিকে বাঁধ উপচে হাওড়ে পানি ঢুকছে।
তিনি নিরাশ হয়ে বলেন, গত ১০-১৫ দিন ধরে চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিকাল ৪টার দিকে ২৭নং পিঅইসির অধীন বাঁধ ভেঙ্গে গুরমার হাওড়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর বলেন, পাটলাই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। অবশেষে বিকালে বাঁধ ভেঙে গেল।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে আমরা এই বর্ধিত গুরমার হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষার জন্য কাজ করেছি। আজ বিকাল ৪টার দিকে বাঁধটি অবশেষে ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক মহোদয় আসছেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, তারা এই হাওড়ের ফসল রক্ষায় গত ১৫ দিন ধরে লড়াই করছেন। কৃষক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা সবাই মিলে হাওড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধটি সংস্কারের কাজ করেছেন তারা। দিনরাত সেখানে অবস্থান করেছেন। শেষ পর্যন্ত গুরমার হাওড়ের বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে উজানের ভারি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে নদ নদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রোববার সকাল থেকে ঢলের পানি হাওড়ের পাড় উপচে তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওড়ে প্রবেশ করতে শুরু করে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে হাওড়ে ব্যাপক পানির চাপ সৃষ্টি হয়। এরপর রোববার সকালে বাঁধ উপচে হাওড়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরসংলগ্ন নদীগুলো ভরে উঠায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় সকাল থেকে আতঙ্কিত ছিলেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা রোববার দুপুর ১২টায় ছিল ৫ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার।
এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী জাদুকাটায় এ সময়ে পানি বেড়েছে ৭১ সেন্টিমিটার, পাটলাই নদীতে ৪৩ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩ মিলিমিটার।