সিলেটে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিত সামি: আসামিরা বাড়িতে, টাকার ‘ধান্ধায়’ মেতে উঠেছেন ওসি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৭:১০,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০২২
আসামিরা সদর্পে বাড়িতে। আর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোর সামি। আর ওসি রমা প্রসাদ চক্রবর্তী টাকার ‘ধান্ধায়’ মেতে উঠেছেন। মামলা গ্রহণেও নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবার আসামিদের বাড়িতে থাকার সুযোগ দিতে গ্রহণ করেছেন টাকাও। আর এতে দোহাই দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারও। ফলে সিলেটের বালাগঞ্জে বানীগাঁওয়ে জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে একটি পরিবার। ওই পরিবারের দাবি; ওসি রমার রমরমা বাণিজ্যের কারণেই দিনে দিনে তারা আরও বেশি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।
বানীগাঁওয়ে শেখ পরিবার। জমিজমা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ পুরনো। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে বিরোধ ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে রয়েছে। বিবদমান দুই অংশের পুরুষ সদস্যরা বসবাস করেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। টাকার গরিমাও আছে তাদের। ফলে গ্রামে আধিপত্য ধরে রাখতেই তাদের এই বিরোধ। এবারের ঘটনা গত ৮ই এপ্রিলের। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফ্রান্স প্রবাসী শেখ সেলিমের কিশোর প্রতিবন্ধী ছেলে শেখ আল মাহমুদ সামিকে মারধর করে অপর অংশের তরুণ রাহিম আহমদ। এক পর্যায়ে রাহিমের পিতা বদিউজ্জামান, চাচা শফিকুল ইসলাম দুদুও এসে তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। বিষয়টি গ্রামের লোকজন দেখলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। এ ঘটনা পর আহত অবস্থায় সামিকে বালাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দু’দিন চিকিৎসাধীন রাখার পর এখন অজ্ঞাত স্থানে রেখে সামিকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
স্বজনরা জানিয়েছেন- ‘সামি শাররীকভাবে প্রতিবন্ধী। তার পিতা ও চাচাদের পরিবারের একমাত্র পুরুষ সে কেবল বাড়িতে আছে। অন্য সবাই প্রবাসে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সামি হাত সব সময় কাঁপে কথায়ও জড়তা আসে। ঘটনার পর প্রবাসে থাকা পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে ওসি রমা প্রসাদ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রবাসী স্বজনরা জানিয়েছেন, মামলা গ্রহণে ওসি রমা প্রসাদ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা দেয়ার পর তিনি মামলা রেকর্ড করেন। এবং ঘটনার দিন রাতেই আসামিদের গ্রেপ্তারে বানীগাওয়ে অভিযানে পাঠান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরুজ্জামানকে। গ্রেপ্তারে গিয়ে আসামিদের বাড়িতেই পান নুরুজ্জামান। গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তীতে রহস্যময় কারনে তিনি তাদের থানায় নিয়ে আসেননি। ওইদিন ঘটনাস্থলে থাকা গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, ওসি রমার ফোন করে আসামিদের রেখে আসার নির্দেশ দেয়ার কারণে এসআই নুরুজ্জামান চলে যান। এরপর থেকে তদন্ত কর্মকর্তা কখনোই আসামি ধরতে যাননি। বরং বিষয়টিতে তিনি বারবার ওসির প্রতি ইঙ্গিত করে তার নির্দেশে থাকেন। অথচ বোয়ালজুর থানার বিট কর্মকর্তা এসআই নুরুজ্জামান। তবে, গতকাল দুপুরের দিকে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার তদন্ত করতে এলাকায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ঘটনার দিনই বালাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রতিবন্ধী কিশোরের মা তাহেরা আক্তার। তিনি আসামি করেছিলেন, একই গ্রামের বাসিন্দা শেখ রাহিম আহমদ, শেখ বদিউজ্জামান ও শেখ শফিকুল ইসলাম দুদুকে। ঘটনার পর থেকে আসামিরা বাড়িতে রয়েছে। তারা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু মামলা দায়ের করার পর থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া সামিকে অজ্ঞান স্থানে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সামির মা তাহেরা আক্তার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মামলা দায়েরের পর আসামিরা তার বাড়িতে এসে সামিকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া সব সময় তারা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। এতে করে তারা নিজ বাড়িতেই জিম্মি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। পুলিশকে ফোন দিলে কোনো কাজ আসে না। বরং ওসি রমা প্রসাদ চক্রবর্তী দুর্ব্যবহার করেন।
তিনি জানান- ‘প্রধান আসামি রাহিমের তৈরি করা একটি ভিডিও দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ওই ভিডিও নিয়ে পুলিশও টাকার ‘ধান্ধায়’ মেতে উঠেছে। সামির উপর নির্যাতনের ঘটনাকে আড়াল করতে এখন ভিডিওটিকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আমাদের ঘায়েল করতে ওসির নেতৃত্বে আসামিরা ফন্দি আটকে বলে দাবি করেন তিনি। অথচ এই ভিডিওটি ঘটনার দু’দিন পর প্রধান আসামি তার আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে। প্রবাসে থাকা স্বজনরা জানিয়েছেন- মামলা গ্রহণের বড় অঙ্কের টাকা গ্রহন করেছেন ওসি। এরপর আসামি ধরতেও টাকা নিয়েছেন। পরে তিনি বদলে যান। উল্টো আমাদের শাসন করছেন। তার এই দ্বিমুখী নীতির কারনে দেশে থাকা প্রবাসী পরিবার পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন যে পক্ষ টাকা দেবে ওসি তার পক্ষেই অবস্থান নেবেন।
তারা জানিয়েছেন- এসব ঘটনা জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রবাসী কল্যান ডেস্বে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এদিকে- মামলা দায়েরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে পুলিশের কাছ থেকে বিমুখ ওই পরিবার আদালতের মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাবইন্সপেক্টর নুরুজ্জামান জানিয়েছেন- এ ঘটনায় তিনি ওসির নির্দেশ পালন করছেন। ওসি অভিযানের নির্দেশ দিলে তিনি অভিযানে যাচ্ছেন। তবে- ভুক্তভোগি পরিবার যাতে ন্যায় বিচার পায় সেদিকে তার নজর রয়েছে বলে জানান। তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন- গত ৮ই এপ্রিল তিনি তিন আসামিকে পেয়েছিলেন। তার সঙ্গে পুলিশের ফোর্স কম থাকার কারনে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি। আর বালাগঞ্জ থানার ওসি রমা প্রসাদ চক্রবর্তী মামলায় টাকা গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন- ‘ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে- কোনো টাকা গ্রহন করা হয়নি। আসামি পক্ষের কাছ থেকেও টাকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’ ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ‘কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা উভয়পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে কারো কারো আত্মীয়ও রয়েছেন আসামির তালিকায়। এসব কারণে আসামি গ্রেপ্তার না করতে চাপ রয়েছে বলে জানান তিনি।’