অপরাধ যেন নেশা: সিলেটে আ.লীগ নেতার গাড়িতে চোরাচালানের পণ্য, গ্রেফতার ৩
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৬:৫৯,অপরাহ্ন ১৫ এপ্রিল ২০২২
অপরাধ যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেটে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর। এক সময়ের পাথরখেকো এই লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে দুদকের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা চলছে। সরকারি সম্পত্তি জাল দলিল করে দখল করার অভিযোগে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। সবশেষ ভারতীয় পণ্য চোরাচালানে মনোনিবেশ করেছেন তিনি। নিজের গাড়িতে করে ছেলে ও ভাতিজাকে দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ১শ পিস দামি মোবাইল পাঠিয়েছিলেন অন্য শিপলু নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তার গাড়িটি আটক করে শাহপরান থানা পুলিশ।
তল্লাশি করে পাওয়া যায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ১শ দামি মোবাইল ফোন। যার আনুমানিক মূল্য ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গাড়িতে থাকা লিয়াকত আলীর ছেলে জাফর সাদেক জয় আলী (২২), লিয়াকতের ভাই ইসমাঈল আলীর ছেলে আক্তার হোসেন (২২) ও গাড়ির ড্রাইভার লিমন মিয়াকে (২৮) আটক করে পুলিশ। লিয়াকতের ব্যবহৃত সিলভার কালারের প্রিমিও গাড়িটিও জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ঘটনায় আটককৃত তিনজনসহ ব্যবসায়ী শিপলুর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামীর তালিকায় নেই লিয়াকত আলীর নাম। তবে এজাহালে উল্লেখ করা হয়েছে এই চোরাচালানে সহযোগীতা করেছেন লিয়াকত আলী।
এসএমপি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে লিয়াকত আলীর ছেলে জয় স্বীকার করে যে, লিয়াকত আলী তার গাড়িতে করে এই তিনজনকে দিয়ে মোবাইলগুলো পাঠিয়েছেন সিলেট শহরের করিমউল্লাহ মার্কেটের এক মোবাইল ব্যবসায়ী শিপলুর কাছে হস্তান্তরের জন্য। পরে লিয়াকত আলী ও শিপলুকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। পরে রাতে আটকৃত তিনজনসহ চার জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি/২৫-ডি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক উত্তম রায় চৌধুরী তার দায়ের করা এজাহারে অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট তামাবিল সড়কে বিশেষ চেকপোষ্ট করে গাড়ি তল্লাশি করার সময় থামার জন্য সিগন্যাল দিলে তা অমান্য করে দ্রুত গতিতে সিলেট শহরের দিকে চলে যায় গাড়িটি। পরে ধাওয়া করে গাড়িটিকে আটক করা হয়।
গাড়িতে থাকা জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরবাগ এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে জাফর সাদেক জয় আলী (২২), লিয়াকতের ভাই ইসমাঈল আলীর ছেলে আক্তার হোসেন (২২) ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পাঠানটিলা এলাকার জমির আলীর ছেলে লিমন মিয়া (২৮) গাড়ির ড্রাইভারকে আটক করা হয়। পরে স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে গাড়ি তল্লাশি করে ভিভো, অপ্পো, রিয়েলমি, রেডমি, স্যামসাং ও পক্কো ব্রান্ডের ১শ সেট ভারতীয় মোবাইল পাওয়া যায়।
এদিকে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে মোবাইল সেটগুলোর মালিক লিয়াকত বলে জানালেও অজ্ঞাত কারণে এজাহারে লিয়াকত আলীর নাম নেই। গাড়ি ও চোরাচালনকৃত মোবাইল সেটসহ আটককৃত ৩ জন ও ব্যবসায়ী শিপলুর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি ও ২৫-ডি ধারায় শুল্ক ফাঁকি ও নিজেদের হেফাজতে রাখার অপরাধে অভিযোগ করেছে মামলার বাদী উত্তম রায় চৌধুরী।
এ বিষয়ে শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান যুগান্তরকে জানান, চোরাচালাকৃত পণ্যের মালিক হিসেবে আরও একজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিতর্কিত লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় ওষুধ ও মোবাইল চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। কিন্তু এই প্রথম তার চোরাচালানের পণ্য ধরা পড়ল।
লিয়াকত আলীর ঘনিষ্ঠজনদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, তার ছেলে ও ভাতিজাসহ চোরাচালনকৃত মাল আটক ও ছেলে ভাতিজা গ্রেফতারের পর গভীর রাত পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের এক বড় নেতার বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন লিয়াকত আলী। সেখান থেকে চোরাচালানকৃত পণ্যসহ ছেলে ও ভাতিজাকে ছাড়িয়ে নিতে নানা তদবির চালিয়েছেন। এসব বিষয়ে লিয়াকত আলীর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।