একটি চাকরি ওদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৬:৩১,অপরাহ্ন ১২ এপ্রিল ২০২২
একেকটি গল্প যেন একেকটি চিত্রনাট্য। অভাব অনটনের সংসার। কারও পিতা নেই। দরিদ্রতা গ্রাস করেছে পরিবারকে। সামনে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। এমন অবস্থায় একটি চাকরি যেন তাদের কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। তাও আবার বিনা টাকায় চাকরি। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সিলেট জেলা পুলিশ।
এতে বাহবা কুড়াচ্ছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনও। কয়েক বছর আগে চাকরির জন্য টাকার প্রয়োজন পড়তো। দিতে হতো ঘুষও। আর নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ তো ছিলই। কিন্তু সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে সিলেটে। গতবার সিলেট জেলা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেননি কেউ। এবারেরটাও ব্যতিক্রম। গেল বার গোয়াইনঘাটের একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে টাকা লুটে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। এবার পুলিশের নজরদারির কারণে ওই চক্রটিও লাপাত্তা। ওসমানীনগরের বনগাঁও গ্রামের মেয়ে সিমলা সূত্রধর। এ বছরই এইচএসসি পাস করেছে। ২০২১ সাল তাদের পরিবারের জন্য দুঃখের বছর। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি পিতা নির্মল সূত্রধর। করোনার যাঁতাকলে পিষ্ট পিতা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। মা, দুই ভাই ও এক বোনের সংসারে নেমে আসে কালো আঁধার। সবাই পড়ালেখা করছে। টানাপড়েনের সংসার। এমন সময় জেলা পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন সিমলা। পরিবার ভেবেছিল টাকা লাগবে। কিন্তু না শুরুতে খরচ হওয়া ১৩০ টাকাতেই পুলিশে চাকরি পেয়ে গেলেন সিমলা। এমন ঘটনাকে বিশ্বাস করতে পারছে না ভাই শিমুল সূত্রধর সহ পরিবারের সদস্যরা। এমনও কী ঘটে এখন- এ প্রশ্ন গতকাল করলেন শিমুল। বললেন- এই চাকরিটি যেন আমাদের কাছে বেঁচে থাকার অবলম্বন। সিলেট জেলা পুলিশে এবার বিনা টাকায় কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৯৫ জন। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের গল্প আলাদা আলাদা। কিন্তু স্বপ্ন এক।
সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- ‘যাদের আমরা নিয়োগ দিয়েছি তাদের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া তারা যেন সত্যিকার অর্থে একজন মানবসেবক হয়। এবং তারা তাই হবে। কারণ- তারা চাকরির শুরুতে অসততার পথ অবলম্বন করেনি। আমাদের সবার উচিত এই দেশটাকে ভালোবেসে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ রেখে যাওয়া। যদি এটি করতে হয় তাহলে সবার আগে নিয়োগে অনিয়ম ঠেকাতে হবে। যদি এটি সম্ভব হয় তবে অনেকখানি পরিবর্তন আনতে পারবো আমরা।’
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ১৫ জন পিতৃহীন দরিদ্র পরিবারের সন্তান, ৪২ জন প্রার্থীর পিতা দরিদ্র কৃষক এবং ৭৫ জন প্রার্থী তাদের পরিবারের প্রথম সরকারি চাকরিজীবী।’ তিনি জানান, ‘এই নিয়োগের পর আমরা অন্তত বলতে পারবো; ৯৫টি পরিবার আগামীর স্বপ্ন পূরণে একটি চাকরি পেলো। এটিই আমাদের বড় অর্জন। এবং এর অংশীদার শুধু পুলিশ নয়, সিলেটের মানুষও।’ সিলেট জেলা পুলিশের প্রেস উইং শাখা জানিয়েছে, গত ২০ থেকে ২২শে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সিলেট জেলা পুলিশ লাইনে কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে। তার আগে অনলাইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৮৪৮ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে ফিজিক্যাল এন্ডোরেন্স টেস্টের জন্য মাঠে আহ্বান করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে ২১৬২ জন চাকরিপ্রত্যাশী মাঠে উপস্থিত থেকে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দেন। ৩ দিনের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই প্রক্রিয়ায় ৬৭৩ জন প্রার্থীকে শারীরিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়। শারীরিকভাবে যোগ্য প্রার্থীদের গত ২৯শে মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট ৬৬৬ জন প্রার্থীর মধ্য হতে গত শনিবার ঘোষিত ফলাফলে ১৫৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। একই দিন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ কমিটি কর্তৃক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে ৯৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ৮৪ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী রয়েছেন।