পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ শরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২২, ৭:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। সোমবার (১১ এপ্রিল) দেশটির পার্লামেন্টে ১৭৪ সদস্য তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোট দিয়েছেন। খবর দ্য ডনের।
সোমবার পার্লামেন্টে ভোটগ্রহণের আগে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি থেকে ওয়াক আউট করেন। এর আগে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শাহ মেহমুদ কোরেশি নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া বয়কটের ঘোষণা দেন।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মূলত ২০২৩ সালের আগস্টে। কিন্তু তার আগেই অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। অতীতের রেকর্ড অনুসরণ করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতনও হয়েছে মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় এমএনএ আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে। এর আগে সোমবার সাময়িক বিলম্বের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং নাত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শুরু হয়। ওই সময় অধিবেশন পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি।
কাসিম সুরি নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশের পর পিএমএল-এন নেতা আয়াজ সাদিক দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের নিয়ম এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত পড়ে শোনান। তিনি জানান, ভোট গ্রহণ শুরুর আগে পাঁচ মিনিট ধরে বেল বাজানো হবে, যাতে সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন।
আয়াজ সাদিক জানান বেল বাজা বন্ধ হলে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ এবং বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ভোট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তা বন্ধ রাখা হবে।
ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীদের নাম পড়ে শোনান আয়াজ সাদিক। পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ এবং পিটিআই এর শাহ মাহমুদ কোরেশির নাম ঘোষণা করেন তিনি। তবে এসময় ভুলবশত তিনি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে পিএমএল-এন এর সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফের নাম বলে ফেলেন। দ্রুত তা সংশোধন করে তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমা চাইছি শাহবাজ সাহেব, নওয়াজের নাম আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে।’
এরপরে আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যারা শাহবাজ শরিফের পক্ষে যারা ভোট দিতে চান তাদের বাম পাশে এবং যারা কোরেশির পক্ষে তাদের ডান পাশে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান আয়াজ সাদিক। পরে ভোট শেষে রেজাল্ট শিট পার্লামেন্ট সচিবালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবটি পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২টি ভোট।
দেশের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। এ অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এতে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়ে পাকিস্তান।
এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের শরণাপন্ন হন। টানা পাঁচদিনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ।