মায়ের লাশের সঙ্গে ঢাকা ছাড়লো ওহি-রাহি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৪:৫৩,অপরাহ্ন ৩১ মার্চ ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ফুটফুটে দুই শিশু হুমায়রা ইয়াসমিন ওহি (৯) ও রাফিয়া ইয়াসমিন রাহি (৬)। সকাল হলেই দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে ছুটতেন মা সাবিনা ইয়াসমিন। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবারও মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সে আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে। রওনা দিয়েছিলেন একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। কিন্তু সন্তানদের নিয়ে আর স্কুলে ফেরা হলো না ইয়াসমিনের। পথেই ঘাতক বাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। সন্তানদের চোখের সামনে মৃত্যু হয় তার।
শোকে পাথর অবুঝ দুই বোন। মায়ের লাশের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যায় তারা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ওহি ও রাহিকে হারাতে হয়েছে মাকে। মায়ের সঙ্গে একেবারে ঢাকা ছেড়েছে ছোট দুই শিশু। থাকা হবে না আর ঢাকায়। যাওয়া হবে না প্রিয় স্কুলে।
ঢাকার মিরপুরের ভাষানটেক থানা এলাকায় গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে। স্বামী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিআরপি কলোনি বি-৩৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয়তলায় সন্তানদের নিয়ে থাকতেন সাবিনা ইয়াসমিন। চাকরির সুবাদে স্বামী থাকতেন সিরাজগঞ্জে। নিয়মিত বাসায় আসা-যাওয়া ছিল তার। ঘটনার দিনও ঢাকায় আসছিলেন রফিকুল ইসলাম।
নিহতের দেবর জামিল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ওহি ও রাহিকে নিয়ে ঢাকায় ফেরা হয়নি। তারা তাদের মামার বাড়ি বগুড়াতে আছে। তাদের বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। তারা আপাতত মামার বাড়িতেই থাকবে। ঢাকায় আর আসবে না। ঢাকায় এসে কার কাছে থাকবে। ঢাকায় তো তারা মায়ের কাছে থাকতো। মা তো আর বেঁচে নেই। বাবা চাকরির সুবাদে সিরাজগঞ্জ থাকেন। তিনি যমুনা সেতুতে রেলওয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রজেক্টে চাকরি করেন। আগে নেভিতে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি ঢাকাতেই আসতে ছিলেন। ওহি চতুর্থ শ্রেণিতে আর রাহি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। দুইজনই বিএন স্কুলের ছাত্রী ছিল। বাবা ঢাকায় না থাকায় প্রতিদিন তাদের মা স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। একটু ভালো পড়াশোনার জন্য মা তাদের নিয়ে ঢাকাতে থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার হুমায়রা ইয়াসমিন ওহি (৯) ও রাফিয়া ইয়াসমিন রাহিকে (৬) নিয়ে রিকশায় বিএন স্কুলের দিকে যাচ্ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। মিরপুর-১৪ নম্বর নেভি মার্কেটের সামনে ট্রাস্ট পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস রিকশাকে ধাক্কা দিলে দুই শিশু সন্তানসহ রাস্তায় ছিটকে পড়েন ইয়াসমিন। দুই সন্তান কম আহত হলেও তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল এবং বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইয়াসমিনের ভাই মামুন বলেন, ওহি ও রাহি এখন আমাদের বাড়িতে আছে। এই ঘটনায় আমরা কোনো মামলা করিনি। যে মারা গিয়েছে সে তো ফিরে আসবে না। আমার দুই ভাগ্নি বাড়িতেই থাকবে। আমার বোন শুধু ভাগ্নিদের নিয়ে ঢাকায় থাকতো। বোনের স্বামী চাকরির সুবাদে সিরাজগঞ্জে থাকতো। সেখান থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া ছিল তার। ঘটনার দিন তিনি বলেন, ট্রাস্ট কোম্পানির বাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে আমার বোন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় আমার দুই ভাগ্নিও আহত হয়েছে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলার পশ্চিম ভরণশাহী গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামীর সঙ্গে বিআরবি কলোনি বি-৩৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয়তলায় থাকতেন।
ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার পর আমাদের পুলিশ সদস্যরা খোঁজখবর নিয়েছে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য আমরা লাশ নিয়ে আসি। নিহতের স্বামী রফিকুল ইসলাম ও তার আত্মীয়-স্বজনকে আমরা মামলা করার জন্য বলি। তার স্বামী লিখিতভাবে আমাদের বলেন যে, তারা কোনো মামলা ও তার স্ত্রীর ময়নাতদন্ত করতে চান না। তখন আমরা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার কথাও জানাই কিন্তু তিনি তাতেও রাজি হননি। তিনি নেভিতে চাকরি করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। বিষয়টি তাদের ইউনিটকেও জানানো হয়েছিলো। পরে থানায় আত্মীয়-স্বজন নিয়ে লিখিতভাবে লাশ নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় দায়ী গাড়ি শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মামলা না হওয়ায় দায়ীদের খুঁজে বের করা হবে কিনা এটিও স্পষ্ট নয়।