মাংসের দামে কারসাজি জিম্মি ক্রেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৭:৪১,অপরাহ্ন ৩০ মার্চ ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সয়াবিন তেলের পর এবার গরুর মাংসের দাম নিয়েও চলছে কারসাজি। রোজার আগেই গরুর মাংসের দাম আরও বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। শবেবরাতে অতিরিক্ত চাহিদার অজুহাতে ৬০০ টাকা বিক্রি হওয়া গরুর মাংস কেজিতে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু শবেবরাত চলে যাওয়ার ১০ দিন পরও দাম আর নামেনি। ৭০০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। বাজারে গরুর মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে কারো কোনো তদারকি নেই। তাই বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে ভোক্তারা।
জানা গেছে, প্রতি বছর রোজার আগে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে এবার এখন পর্যন্ত দাম নির্ধারণ করেনি তারা।
এই সুযোগেই কারসাজি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক সপ্তাহ আগেও ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতারা। এছাড়া এখন অন্যান্য মাংসের দামও বাড়তি রয়েছে। বাজারে খাসির মাংস কেজিপ্রতি ৯৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।
বিক্রেতাদের কারসাজিতে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ ভোক্তারা। তারা বলছেন, রোজা আসলেই বিক্রেতারা নানা অজুহাত দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেয়। তাদেরকে ঠেকানো যায় না। এতে রোজায় চাহিদামতো পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হয় ভোক্তাদের। তবুও নিরুপায় হয়ে তাদের বেশি দাম দিয়েই এসব পণ্য কিনতে হয়।
বাসাবো বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসে সুমন খান নামের এক ক্রেতা জানান, সপ্তাহে একবার পরিবার নিয়ে মাংস খাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সন্তানের পছন্দের কারণে অধিকাংশ সময়ই ব্রয়লার মুরগি কেনা হয়। কিন্তু গতকাল ১২০০ টাকা নিয়ে শখ করে দুই কেজি গরুর মাংস কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়তি দামের কারণে গরুর মাংস না কিনে ব্রয়লার মুরগিই কিনতে হয়েছে তাকে। সুমন বলেন, জিনিসপত্রের দাম কখন কোনটা বেড়ে যায় আমরা ধারণাই করতে পারি না। গত মাসেও ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কিনলাম। আজ ৭০০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। রোজা এলেও তারা দাম বাড়ায়। কেউ নজরদারি করে না। জাবেদ আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, শবে বরাতের আগের দিন মাংস কিনলাম ৭০০ টাকা দিয়ে। তখন তারা বলল, শবে বরাতে চাহিদা বেশি তাই দাম বাড়ছে। দুই-একদিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে। অথচ আজকে এসেও দেখি একই দাম। কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে সেটা আর কমানো হয় না। আমরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে থাকি। আরেক ক্রেতা ফেরদৌস আহমেদও একই কথা জানান। তিনি বলেন, সব কিছুর দামই তো বেশি। বাজার ঠিকমতো মনিটরিং করা হচ্ছে না। এজন্য যে যার ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছে। ভোগান্তি হচ্ছে শুধু আমাদের।
এদিকে মাংস বিক্রেতারা বলছেন, তারা সরাসরি খামার থেকে গরু কিনতে পারেন না। বিভিন্ন হাত বদল হয়ে তাদের গরু কিনতে হয়। এছাড়া বর্তমানে গরুর ভুসির দাম বেড়েছে। রোজার আগে মাংসের চাহিদাও বেড়ে যায়। এতে তাদেরকেও হাট থেকে বেশি দামে গরু কিনতে হয়। এজন্য দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন তারা। তবে এই দাম রোজা শুরু হলে আবার কমে যাবে বলেও দাবি করেন বিক্রেতারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, গত দুই বছর থেকে সিটি করপোরেশন থেকে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে না। তবে এবার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।
তেলের মতো গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধিতেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। তিনি বলেন, কাল আমি নিজেও ৭০০ টাকায় গরুর মাংস কিনেছি। অথচ কিছুদিন আগেও ৬০০ টাকা দিয়ে নিয়েছিলাম। দাম বাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে বিক্রেতারা বলে গরু নেই। রোজা আসলেই শুধু গরু উধাও হয়ে যায়। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা নানান অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। কোন ভাউচারও দেয়া হয় না ভোক্তাদের। এজন্য ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগও দিতে পারে না তারা। সরকারের এখানে মনিটরিং করা উচিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই ভোক্তারা কষ্টে আছেন। হঠাৎ এসব পণ্যের দাম বাড়লে তা আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম হঠাৎ করে কেন ৭০০ টাকা হবে? আমরা জানতে চাই। সরকার যদি দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে আমরা ব্যবসায়ীদের আক্রমণ করবো। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। তাই এর আগেই যেন সরকার থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারা যেন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আমরা জোর দাবি করছি।