পুরোনো চেহারায় সিলেটের আতিয়া মহল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২২, ৭:২২ অপরাহ্ণ
দেবাশীষ দেবু:
আতিয়া মহলের মালিক উস্তার মিয়া বলেন, ‘ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর ভবনটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। তখন ভবনটি অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো ছিল। এরপর প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করেছি।’
পাঁচতলা আবাসিক ভবনটি ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা, ৪২ পরিবারের সদস্যরা ছিলেন সেখানে। আকস্মিক ২০১৭ সালে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ভবনটির একাংশ। আতিয়া মহল নামে বাড়িটির পরিবেশ ও পরিচয় বদলে যায় দ্রুত। অনেকেই এটিকে জঙ্গিবাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করে আলোচনা করেন। সংস্কার কাজের পর ফের প্রাণবন্ত ভবনটি। নতুনদের পাশাপাশি পুরোনো ভাড়াটিয়াদের অনেকে ফিরেছেন ভবনে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় পরও তাদের তাড়িত করে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চের ভয়াল স্মৃতি। তবে নতুন ভাড়াটিয়ারা অনেকে জানেন না সে সময়ের ঘটনা।
আতিয়া মহলের জানালা, দরজা, গ্রিল, দেয়াল মেরামত করা হয়েছে, পড়েছে রংয়ের প্রলেপ। যদিও বাইরের দেয়ালে মালিক বেছে নিয়েছেন আগের হালকা সবুজ রং। বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া প্রধান ফটকটি পড়ে আছে ভবনের একপাশে। ফটক ছাড়া পুরোনো সব ক্ষতই এখন অদৃশ্য।
পুরোনো ভাড়াটিয়াদের মধ্যে ৪টি পরিবার ফিরেছে এ ভবনে। তাদেরই একজন তারেক আহমদ বলেন, ‘মাঝে মাঝে ওই সময়ের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। তবে এগুলো আমরা ভুলে থাকতে চাই।
পুরোনো চেহারায় আতিয়া মহল
বিস্ফোরণ ও অভিযানের পর আতিয়া মহল। ছবি: নিউজবাংলা
‘২৩ মার্চ রাতেই পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল ভবন। তবে আমরা জেনেছি সকালে। ঘুম থেকে জেগে এমন সংবাদ শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরদিন সেনাবাহিনীর টিম আমাদের উদ্ধার করে। তার আগে মনে হচ্ছিল জীবনের শেষ সময়ে পৌঁছে গেছি।’
আতিয়া মহলের নিচতলার যে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল, সেটিতে উঠেছেন ভাড়াটিয়া ফাতেমা নাজির। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা পাশের বিল্ডিংয়ে ছিলাম। মা, বোন ও দুই সন্তান নিয়ে এখানে থাকি।
‘অভিযানের অনেক পর আমরা এখানে এসেছি। এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। পুরোনো সেসব ঘটনা আমরা মনে করতে চাই না।’
আতিয়া মহলের মালিক উস্তার মিয়া থাকেন পাশের আরেকটি বাড়িতে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর জিঙ্গাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে কয়েক দফায়। বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত ভবন নিয়ে ছিলেন উদ্বিগ্ন।
উস্তার মিয়া বলেন, ‘ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর ভবনটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। তখন ভবনটি অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো ছিল। এরপর প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করেছি।
‘আগেও সব ভাড়াটিয়ার ভোটার আইডির ফটোকপিসহ তথ্য রাখতাম, এখন আরও সতর্ক। ভালোভাবে যাচাই না করে ভাড়াটিয়া তুলছি না। থানাতেও জমা দেয়া হয় তাদের তথ্য। ঘটনার পর থেকে পুলিশের টহল বেড়েছে আতিয়া মহলের চারপাশে।’
আতিয়া ভবনের একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গি থাকতে পারে- এমন তথ্যে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ রাতে অভিযান শুরু হয়। পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টিম যোগ দেয় এ অভিযানে। টানা ১১১ ঘণ্টা অভিযানের পর আতিয়া মহল থেকে উদ্ধার করা হয় জঙ্গি পরিচয়ের চারজনের মরদেহ।
এ ঘটনায় র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, দুই পুলিশ সদস্যসহ মোট ৭ জন নিহত হন। অভিযানে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে আতিয়া মহল ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরমভাবে।
আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর দুটি মামলা হয়। যার তদন্ত স্থানীয় থানা পুলিশ শুরু করলেও পরে তা স্থানান্তর হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে। ২০১৯ সালে একটি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অন্যটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।
বিস্ফোরণের মামলায় আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেনেড হামলার হোতা ছিল তিনজন। পৃথক অভিযানে তারা সবাই নিহত হওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি করার মতো আসামি কেউ নেই।
আরেক মামলায় আত্মঘাতী জঙ্গি মর্জিনা খাতুনের ভাই জহুরুল হক, ভাবি আর্জিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানা ও হাসান নামে তিনজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তিন আসামিই কারাগারে আছেন।
এই মামলাটি সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি নিজাম উদ্দিন।
নিউজ বাংলা