নারীদের শয়ন কক্ষে ডেকে আনেন মন্দিরের সেবাইত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২২, ৪:৫১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পুষাইনগরস্থ ‘শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘ (সিটিএস) এবং শ্রী গৌড়াঙ্গ মহাপ্রভুর দেবালয়’ মন্দিরের মহারাজ শুভেন্দু সিকদার (দামোদর) এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন পূজারি ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মন্দিরের মহারাজ দামোদরকে অপসারণের দাবি জানান এলাকাবাসীসহ মহারাজ যতী গোস্বামীর অনুসারীরা।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন পুষাইনগর এলাকাবাসীর কয়েকজন ও যতী গোস্বামীর অনুসারীরা।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট নগরের বাসিন্দা যতী গোস্বামীর শিষ্য অনীলা ঘোষ। লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অনীলা ঘোষ বলেন, শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নেতৃত্বে শ্রী গৌড়াঙ্গ মহাপ্রভুর দেবালয় সংস্কারকাজ ও নির্মাণ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তাঁরই শিষ্য শুভেন্দু সিকদারকে (দামোদর) এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দেন। যে কি না আজ তারই সর্বনাশ করছে, পাশাপাশি মন্দিরের পরিবেশ ও সম্মানকে নষ্ট করছে।
তিনি বলেন, দামোদর একটি কুচক্রী মহলের সাথে আঁতাত করে গুরু মহারাজের নামে ষড়যন্ত্র করছে। নানা অপবাদ রটাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা এই মন্দিরকেন্দ্রীক লোভে পড়ে ভূমিখেকোদের সাথে জোট বেঁধেছেন মন্দিরের বর্তমান মহারাজ শুভেন্দু সিকদার (দামোদর)। মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নামে।
অনীলা ঘোষ বলেন, মন্দিরে নারীদের রাতযাপন একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু সিটিএসের নিয়ম ও গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নির্দেশ অমান্য করে এখানে নারীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন দামোদর। এমনকি নিজের দুই মাসিকে এখানে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছেন। মন্দিরের শোবার ঘরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন নারীদের শয়নকক্ষে ডেকে আনা দামোদরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
মন্দিরের সব হিসাব জায়েন্ট অ্যাকাউন্টে হওয়ার কথা থাকলেও দামোদর নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে শিষ্যদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। মূলত এই মন্দিরকে নিজের স্বার্থে ও লাভের জন্য ব্যবহার করতে নানা অপকৌশল গ্রহণ করছে একটি মহল। যেই মহলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভেন্দু সিকদার (দামোদর)।
অনীলা বলেন, মন্দির সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তৎকালীন মন্দির কমিটি ও শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘের মধ্যে দলিলে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সিটিএস ও গুরুমহারাজ যতী গোস্বামীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পর যতী গোস্বামী এই মন্দিরকে নতুন করে তোলেন। যা বর্তমানে পুষাইনগর প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও ভক্ত অনুরাগীদের সমাগমের জন্য এটি প্রসিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মন্দিরের মহারাজ দামোদরের নেতৃত্বে স্বার্থান্বেষী মহল এই মন্দিরের সম্মান ক্ষুন্ন করছেন। নানা ষড়যন্ত্রে মন্দিরকে নিজেদের ব্যবসা ও মুনাফার ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সে সময় মন্দির উন্নয়ন ও পূণঃনির্মাণ কমিটির ১০ জনের একজন ও জয়চন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. ননী গোপাল দাস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই মন্দির নির্মাণ করতে গুরু মহারাজ যতী গোস্বামী যা পরিশ্রম করেছেন, তা কখনও ভোলার নয়। কিন্তু আজ নিজেদের স্বার্থে একটি মহল তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, মন্দিরের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায়ের সমাধানকল্পে আমাদের দাবি জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। এই তদন্তের আলোকে এর সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান করে দেন। তা না হলে এই এলাকার সাধারণ মানুষের প্রাণের প্রিয় একটি জায়গা, সাধারণ মানুষের আবেগের ও শ্রদ্ধার জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিক্তা রায়, সান্তনা ঘোষ, প্রার্থনা বণিক, শিউলী রানী দাশ, বিপ্লব ঘোষ ও কার্তিক দত্ত।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মহারাজ শুভেন্দু সিকদার (দামোদর) বলেন, আপনারা সাংবাদিক, সত্যতা যাচাই করা আপনাদের দায়িত্ব। একদিন আসেন প্রয়োজনে আপনাদের সময়ে সময় দিয়ে আসেন। আমার কাছে সকল প্রমাণ ও দলিলাদি আছে। এগুলো দেখবেন সত্য মিথ্যা যাচাই করবেন। এভাবে হাওয়ার উপর কথা বলে আসলে দুপক্ষেরই ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল ফোনে বিস্তারিত বলতে পারবেন না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।