শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি : অতঃপর…
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২২, ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
সূর্য্য রায়, লাখাই প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের লাখাইয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে শত শত শিক্ষার্থী রাজপথে নেমে ব্যানার ফেস্টুন ও হ্যান্ডবিল নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মুমিনুল হকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
২৩ মার্চ ( বুধবার) বামৈ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন হবিগঞ্জ- লাখাই সড়কে সকাল ১০ টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী। এঘটনার পরপরই লাখাই থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং অভি্যুক্ত শিক্ষক মুমিনুল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত হওয়ার পরে বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নেয়।
জানা যায়, গত ২২ মার্চ লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরিফ উদ্দিন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন নিপীড়নের শিকার জনৈক ছাত্রীর পিতা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্লীলতাহানীর শিকার ওই ছাত্রী বামৈ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
শিক্ষক মুমিনুল হক প্রায়ই স্কুলে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করতেন ।
বিভিন্ন সময় তার আচরণ দ্বারা ওই ছাত্রীকে যৌনভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতেন। এ কারণে ওই ছাত্রী মমিনুলকে এড়িয়ে চলতেন।
বিষয়টি ছাত্রীর পরিবারকে জানালে পরিবার তাকে নিরবে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেয়।
গত ১৬ মার্চ সকাল ১০ টায় স্কুলের প্রাত্যহিক সমাবেশ ( এসেম্বলী ) শুরু হলে ওই ছাত্রী শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় এসেম্বলিতে না গিয়ে স্কুল ভবনের তৃতীয় তলায় তার শ্রেণীকক্ষে বসেছিলেন।
এ সময় সহকারী শিক্ষক মোঃ মুমিনুল হক ওই ছাত্রীর কাছে গিয়ে অশ্লীল যৌন ইঙ্গিত প্রদর্শন করতঃ তার হাতে জাপটে ধরে ।
এসময় বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন এবং আয়া গৌড়ী এর আগমনের সাড়া পেয়ে হাত মমিনুল হাত ছেড়ে দেন । গিয়াস উদ্দিনকে মোঃ মুমিনুল হক তখন বলেন, সে অসুস্থ এসেম্বলিতে যাবে না ।
মুমিনুলের এই আচরণে ছাত্রী হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তারা চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্রী ছাদে চলে যান।
কিছুক্ষণ পর মোঃ মুমিনুল হক ছাদে গিয়ে আবার ছাত্রীকে যৌন উদ্দেশ্যে জাপটে ধরেন।
তখন ছাত্রী তার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে অনেক চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে চিৎকার করলে মুমিনুল হক তার মুখ চেপে ধরেন ।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ আব্দুল করিম ঘটনাস্থলে এসে পড়লে মমিনুল ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেন এবং স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ চৌধুরীকে জানানোর পরেও তিনি মুমিনুল হকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে বরং তাকে রক্ষায় যাবতীয় চেষ্টা-তদবির চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদিকে এ ঘটনাটি লোকমুখে জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় ।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শরিফ উদ্দিন জানান, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত শিক্ষক মুমিনুল হককে সাময়িক বহিষ্কার করার জন্য প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলছে।