কানাইঘাটে বিচ্ছিন্ন সেই পা মিলল পলিথিনে মোড়ানো
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২২, ৩:৪৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের কানাইঘাটে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জের ধরে কামাল উদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ডান পা বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিল প্রতিপক্ষের লোকেরা। ঘটনার একদিন পর কেটে নেওয়া সেই পায়ের অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে এএসপি আব্দুল করিম ও থানার ওসি তাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে কামাল উদ্দিনের উপর সশস্ত্র হামলাকারী মামুন আহমদের বসতবাড়ীর পুকুরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত একটি খড়ের ঘর থেকে পলিথিন প্যাঁচানো অবস্থায় বিচ্ছিন্ন করা পায়ের অংশ পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এর আগের দিন শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার দক্ষিন বানীগ্রাম ইউনিয়নের ছত্রপুর গ্রামে কামাল উদ্দিনের উপর সশস্ত্র হামলার ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে ফাতেহা বেগম নামে এক মহিলাকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিনও থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়- গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জের নিয়ে ছত্রপুর গ্রামে আদিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মৃত এবাদুর রহমান ও মৃত খলিলুর রহমানের গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত। অনুমান ২ বছর পূর্বে এ দ্বন্দ্বের জের ধরে এবাদুর রহমান নামে একজন কামাল উদ্দিনের গোষ্ঠীর লোকদের হাতে মারামারিতে নিহত হন। এবাদুর রহমান নিহত হলে কামাল উদ্দিনসহ তার পক্ষের বহুলোকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় কামাল উদ্দিন প্রায় ৮ মাস জেল খেটে অনুমান বছর খানিক পূর্বে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর আগে এবাদুর রহমানের গোষ্ঠীর লোকজনের হাতে কামাল উদ্দিন দু’দফা হামলার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
কামাল উদ্দিন জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে তার উপর এবাদুর রহমানের গোষ্ঠীর লোকজন ক্ষুব্দ ছিল। এর জের ধরে শনিবার (১৯ মার্চ) বিকেল অনুমান ৫টার দিকে কামাল উদ্দিন নিজ বাড়ী থেকে গাছবাড়ী বাজারে যাবার পথে এবাদুর রহমানের গোষ্ঠীর ফয়জুল হকের পুত্র মামুন আহমদের বাড়ীর পাশে আসামাত্রই তার উপর মামুন আহমদসহ এবাদুর রহমানের গোষ্ঠীর ৮/১০ জন দেশীয় ধারালো অস্ত্র, কুড়াল ইত্যাদি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা কামালের ডান ও বাম পা, দুইহাতে কুপিয়ে ধারালো রক্তাক্ত জখম করে ডান পা হাঁটুর নীচ অংশের গোড়ালি কেটে নিয়ে যায়। কামাল উদ্দিনের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। তার অবস্থাজনক বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম পিপিএমসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। রাতেই ছত্রপুর এলাকায় অবস্থান করে কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল করিমের নেতৃত্বে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক ও কেটে নিয়ে যাওয়া পায়ের অংশ উদ্ধার করতে এলাকায় পুলিশ সাঁড়াশি অভিযানে নামে। এর মাঝে শনিবার রাতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে মামুন আহমদ এর স্ত্রী ফাতেহা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিনকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
এদিকে রবিবার বিকেলে ৫টার দিকে কামাল উদ্দিনের উপর সশস্ত্র হামলাকারী মামুন আহমদের বসতবাড়ীর পুকুরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত একটি খড়ের ঘর থেকে পলিথিন প্যাঁচানো কামাল উদ্দিনের বিচ্ছিন্ন করা পায়ের অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত কামাল উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম।
তিনি বলেন- গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। কামাল উদ্দিনের কেটে নেওয়া ডান পায়ের গোড়ালীর অংশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। যারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ফাতেহা নামে এক মহিলাকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে।