অবহেলায় সিলেটের ব্রিটিশ স্থাপত্য
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২৯:০৩,অপরাহ্ন ২১ মার্চ ২০২২
সুরমা নদী সিলেট নগরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ব্রিটিশ ঐতিহ্যে এ অঞ্চলের প্রথম সেতু কিনব্রিজ তৈরি করেছে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। ব্রিজ নির্মাণের রয়েছে ঐতিহাসিক পটভ‚মি। তিরিশের দশকে তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর ছিলেন মাইকেল কিন নামের এক ইংরেজ। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সিলেট পরিদর্শনে এলে তার স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতেই এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যা দেশবাসীর কাছে কিন ব্রিজ নামে পরিচিত।
সিলেটে এই ব্রিটিশ স্থাপত্যের সৌন্দর্য এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ¤øান হতে বসেছে। মালবাহী পিকআপসহ অনেক যানবাহন অবাধে চলছে এ ব্রিজ দিয়ে। ফলে ঐতিহাসিক এ ব্রিজটি পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসক)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিজটি রক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি।
ইতিহাসবিদদের মতে, আসামের সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম করতে সুরমা নদীতে ব্রিজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর অংশ হিসেবে রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তারপর ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। ব্রিজের নামকরণ হয় গভর্নর মাইকেল কিনের নামে। ব্রিজের প্রধান কাঠামো লৌহা দিয়ে নির্মিত। এর আকৃতি অনেকটা ধনুকের মতো বাঁকানো। ব্রিজটির দৈঘ্য ১১৫০ ফুট ও প্রস্থ ১৮ ফুট। এ ব্রিজটি নির্মাণে তখনকার দিনেই ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
সিসিক জানা গেছে, বেশ কিছু বছর আগে ব্রিজটিতে স্থাপন করা হয় ২০টি পোল। পুরনো ৩২টি পোলসহ ৫৬টি এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি লাইট জ্বলছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, দিনের বেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করলেও রাতে পিকআপসহ অন্যান্য মাঝারি যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। এতে উঠে গেছে লোহার রং। সিটি করপোরেশন থেকে এলইডি বাল্ব লাগানো হলেও বর্তমানে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে রাতের বেলা অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ব্রিজের ওপর।
বাংলাদেশ পল্লী ফোরামের চেয়ারম্যান চেধুরী আলী আনহার শাহান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ব্রিজের নির্মাণশৈলী আর স্থায়িত্ব দেখে মুগ্ধ হন দেশের মানুষ। আমাদের প্রাণের এ শহরে ঘুরতে এলেই কিন ব্রিজ দেখতে আসেন পর্যটকরা। তবে আফসোস! কালের সাক্ষী এ ব্রিজের চারপাশে অযতেœর ছাপ। ব্রিজের নিচে নিজেদের পরিবহন দাঁড় করিয়ে রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ব্রিজের ওপর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।
ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা আবিদ কাওসার নামে এক যুবক জানান, অনেক দিন থেকে ব্রিজের লাইটগুলো নষ্ট হয়ে আছে। অনেক জায়গায় গর্ত থাকায় দুর্ঘটনা হয় প্রায় সময়। এছাড়া ছিনতাইকারীদের উৎপাতও রয়েছে।
তবে ব্রিজকে ঘিরে অপরাধ কর্মকান্ড যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কয়েকবার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম, হয়নি। সুরমার ওপর দুই পাশে আরো একাধিক ব্রিজ রয়েছে। অথচ কিন ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করার পর একটি পক্ষ আন্দোলনের ডাক দেয়। বাল্ব, সড়কের গর্তসহ অন্য সমস্যাগুলো খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করা হবে।
জাগো সিলেট