বৃদ্ধ দম্পতির সম্বল এখন পোড়া কম্বল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২৪:০৬,অপরাহ্ন ২১ মার্চ ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
৮০ বছর বয়সী অসুস্থ আলী আহমেদ ও তার স্ত্রী লতা (৬০) বস্তির একটি ঘরে থাকতেন। মানুষের দেওয়া সাহায্য নিয়ে কোনোভাবে চলতো তাদের সংসার। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিজেদের সংসার গুছিয়ে আলাদা থাকেন। সর্বনাশা আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন সম্বল পোড়া একটি কম্বল। পোড়া স্তূপের মধ্যে সেটি বিছিয়ে আলী আহমেদকে শুইয়ে থাকতে দেখা যায়।
রোববার (২০ মার্চ) রাতে রাজধানী কল্যাণপুরের বেলতলা এলাকার ৯ নম্বর বস্তির আগুনে প্রায় তিনশ ঘর পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন সহস্রাধিক মানুষ।
গত ২০ বছর ধরে বস্তিতে থাকেন বৃদ্ধ ওই দম্পতি। অনেক কষ্টে ঘরের কিছু আসবাবপত্র ও নগদ কিছু অর্থ জমিয়েছিলেন। গতকাল রাতের আগুনে পুড়ে সেই সম্বল ছাই হয়ে গেছে।
বৃদ্ধের স্ত্রী লতা জাগো নিউজকে জানান, ছেলে-মেয়েরা আলাদা সংসার নিয়ে আলাদা থাকে। মাঝে মাঝে তারা কিছু সাহায্য করে। আর মানুষের কাছে হাত পেতে চলে সংসার। স্বামী অসুস্থতার কারণে নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। তার সব কিছু স্ত্রী করে দেন। বস্তিতে অনেকের সাহায্যে নিজে একটি ঘর তোলায় কোনো ভাড়া দিতে হতো না। কোনো রকমভাবে দিন কেটে যেত।
তিনি বলেন, অনেক কষ্টে হাতে ১২ হাজার টাকা জমাইছিলাম। ঘরে ঘাট, আলমারি ছাড়াও আরও জিনিস লইয়া ৩০ হাজার টাকা দাম হইবো। আগুন থাইকা অসুস্থ লোকটারে (স্বামী) বাঁচাইতে গিয়া সব সম্বল পুইড়া ছাই হইয়া গেছে। অনেক চেষ্টা করইরাও টাগাগুলো লইতে পারিনি। স্বামীর শরীরে একটি কম্বল ছিল এখন সেটিই একমাত্র সম্বল।
সকালে হাফ লিটার পানি ও একটি ছোট বিস্কুটের প্যাকেট এনে স্বামীকে খাওয়ালেও নিজে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছেন বলে জানান তিনি।
বস্তির মসজিদ গলির মধ্যে থাকতো কহিনুর বেগম। গৃহকর্মীর কাজ করেন। পরিবারে তার তিন ছেলে ও স্বামীর সংসার। তিন ছেলের মধ্যে একজন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। অন্যরা কাজ করে। স্বামী সিএনজি চালায়। গতকাল রাতে স্বামী বাইরে ছিলেন। কহিনুর রাতে বস্তির ঘরে এসে নিজের কাজ করছিল। এসময় চিল্লাচিল্লি শুনে বাহিরে বের হন। চারপাশে আগুন আর প্রতিবেশীদের দৌড়াদৌড়ি দেখে তিনি দিশেহারা হয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে সব সম্বল হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
কহিনুর জানান, গত ১২ বছর ধরে এই বস্তিতে বসবাস করছেন। কখনো এমন ঘটনা ঘটতে দেখেনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে বাসায় এসে পরিবারের কাজ করেন। অনেক রাতে স্বামী বাসায় ফেরেন। এভাবে তাদের ভালোই দিন কাটছিল। আগুনে তাদের সব গ্রাস করে ফেলেছে। ঘরের মধ্যে থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, রূপার নূপুর, ২০ হাজার নগদ টাকা, আসবাবপত্রসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরটি এখন একটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে তিনশ পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করেছে একাধিক এনপিওসহ অনেক সমাজকর্মীরা। তবে দুপুর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে তাদের কোনো সাহায্য করা হয়নি। সব হারিয়ে অনেকে গতকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত অভুক্ত থাকতে দেখা গেছে। যাদের পার্শ্ববর্তী আত্মীয়স্বজন রয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করছেন। যাদের কেউ নেই তারা পোড়া স্তূপের মধ্যে অসহায় হয়ে পড়ে রয়েছেন।