তিন মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মনোয়ারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২১:২৭,অপরাহ্ন ২১ মার্চ ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বস্তির পোড়া স্তূপের বর্জ্য নিয়ে খেলছিল তিন বছরের মেয়ে হালিমা। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় মাথার উপরে একটি পাঁচ হাত নীল রংয়ের প্লাস্টিক দিয়ে তিন মেয়েসহ আর্তনাদ করছিলেন মা মনোয়ারা বেগম। মেয়েদের নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে তিনি। সেই স্তূপের বর্জ্য নিয়ে অবুঝ শিশুটিকে খেলা করতে দেখা যায়।
সোমবার (২১ মার্চ) রাজধানী কল্যাণপুরের বেলতলা এলাকার ৯ নম্বর পোড়া বস্তিতে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।
স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বলে নিজেই রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালান মনোয়ারা। ঘরে তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে গৃহকর্মীর কাজ করলেও অন্য দুই মেয়ে বাসায় থাকে। স্বামী মাঝে মাঝে আসেন। তবে পরিবারের সব ব্যয় ৩০ বছর ধরে মনোয়ারাকে বহন করছিলেন।
মনোয়ারা জানান, গত পাঁচ বছর রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালান। বস্তিতে গত ১৫ বছর ধরে থাকছেন। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতেন। শখ করে বড় মেয়ের জন্য সোনার হার, কানের দুল বানিয়ে ঘরে রেখেছিল। তার সঙ্গে ঘরে নগদ ১৮ হাজার টাকা ও ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল। কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মনোয়ারা বলেন, আমি কাজ থাইকা ঘরে আইসা রান্না করতাছিলাম। এই বাহিরে চিল্লাচিল্লি শুইনা বাহির হইয়া দেখি চারদিকে আগুন। পরে ঘরে থাকা দুই মেয়েকে নিয়া পাশের মাঠে যাইয়া দেখি ঘরের মধ্যে আগুন লাইগা গেছে। চোখের সামনে সব পুইড়া যাইতে দেইখাও কিছু করতে পারি নাই। আমার সব শেষ হইয়া গেছে। আর কিছু নাই। মানসে কিছু খাবার দিছিল সেগুলো মাইয়াগোরে নিয়া খাইছি। দুপুরে কী খামু তা জানি না। একজনের কাছে ছোট একটা প্লাস্টিক আইননা পোড়া ঘরে মাথার উপর বাইন্দা দিছি। হের নিচে মাইয়া তিনটারে নিয়া বইসা আছি। কেউ যদি সাহায্য করে তবে চলতে পারমু না হইলে রাস্তায় বইসা ভিক্ষা করতে হইবো।
গার্মেন্টসে চাকরি করতেন তানিয়া। পরিবারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ও রিকশাচালক স্বামী মিলে থাকেন। গতকাল রোববার রাতে গার্মেন্টস ছুটির পর ঘরে এসে রান্নার কাজ শুরু করেন। এসময় পার্শ্ববর্তী একজন আত্মীয় এসে চিৎকার করে আগুন আগুন বলতে থাকে। চিৎকার শুনে ঘরের মধ্যে থাকা ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখেন চিনের চালে আগুন জ্বলছে। এসময় দিশেহারা হলে ছেলেকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। মুহূর্তের মধ্যে সব সম্বল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছু উদ্ধার করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তানিয়া বলেন, গত ১০ বছর ধরে তারা বস্তিতে থাকেন। স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন কী খামু, কী পরমু, কীভাবে দিন কাটবো কিছুই কইতে পারতেছি না। কেমনে দিন কাটবো তাও কইতে পারতেছি না। ঘরের মধ্যে থাকা সোনার গহনা, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র ছিল। কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি। প্রায় ৮০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
এদিকে, বস্তির মধ্যে নতুন কেউকে প্রবেশ করলে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম নেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। আমার নাম নেন, আমার ঘর পুইড়া গেছে, আমি সব হারাইছি বলে আকুল মিনতি জানাচ্ছেন। বিভিন্ন এনপিও কর্মীরা বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে দেখা গেছে। তবে দুপুর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো ধরনের সাহায্য করতে দেখা যায়নি।